রুহুল আমিন, যশোর প্রতিনিধ
যশোরে কয়েক দিনের টানা বর্ষণে হঠাৎ করে কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছেন ছাতা মেরামতের কারিগররা। সারা বছর কাজ না থাকলেও বর্ষা মৌসুমেই যেন প্রাণ ফিরে পান তারা। শহরের বিভিন্ন মোড়ে ছাতা মেরামতের জন্য দেখা গেছে ভিড়, আর কারিগররা দিনভর বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে কাজ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের ছয় ঋতুর মধ্যে বর্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঋতু। এ বছর আষাঢ় মাসের শুরু থেকেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ছাতার প্রয়োজনীয়তা বেড়ে গেছে বহুগুণ। ঘরে পড়ে থাকা নষ্ট ছাতা মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করতে ছুটে আসছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
শহরের দড়াটানা, চিত্রা মোড়, মাইকপট্টি, পোস্ট অফিস মোড়, চৌরাস্তা, রেলবাজার, টিবি ক্লিনিক মোড়, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড, পালবাড়ি মোড়, ধর্মতলা, আরবপুর মোড়সহ প্রায় প্রতিটি মোড়েই দেখা গেছে ছাতা মেরামতের কাজ করছেন মৌসুমী কারিগররা। রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসে তারা পুরনো ছাতায় নতুন প্রাণ দিচ্ছেন।
রেলবাজারের ছাতা কারিগর কমলেশ মজুমদার বলেন, “বৃষ্টি হলে কাজও বাড়ে। বৃষ্টির দিনে দিনে তিন থেকে পাঁচশ টাকা আয় করা যায়, আর কখনও সেটা হাজার টাকারও বেশি হয়। অন্য সময় তেমন কাজ থাকে না।”
আরবপুর রেললাইনের পাশে বসবাসকারী দিব্য সরকার জানান, তিনি পেশায় পাদুকা শ্রমিক হলেও ছাতা মেরামতের কাজটিও ভালো পারেন। তার ভাষায়, “বাপ-দাদার পেশা এই কাজ। বর্ষার সময় অনেক আয় হয়। প্রতিদিন এখন হাজার টাকার ওপর আয় হচ্ছে।”
নতুন বাজারের কারিগর গণেশ দাশ বলেন, “ছাতার কারিগরদের এখন দুর্দিন চলছে। অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছে। কেউ কেউ টিকে আছি কেবল পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করে। তবে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে আয় বেড়েছে।”
এদিকে সাধারণ জনগণও ছাতা মেরামতের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন। উপশহরের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, “বাচ্চাদের স্কুলে যেতে হয়। ছাতার শিক ভেঙে গেছে, তাই মেরামত করাতে এসেছি।”
দড়াটানা মোড়ের এক ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, “বৃষ্টিতে ছাতা ছাড়া উপায় নেই। পুরোনো ছাতা মেরামত করিয়ে নিচ্ছি। তিনটি ছাতা ঠিক করাতে ২০০ টাকা লেগেছে।”
কারিগরদের মতে, বর্ষা যত দিন থাকবে, তত দিন তাদের কাজ ও আয়ও ভালো হবে। তবে বাকি সময় তারা অন্য পেশা খুঁজে নিতে বাধ্য হন। তাই এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে এবং মৌসুমী কারিগরদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিতে প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ।