পিরিয়ডের দিনগুলোয় হরমোনের ওঠানামা হয় দ্রুত। তাই মুড সুইং বা মেজাজ পরিবর্তনের পরিস্থিতি দেখা যায়। এ সময় অনেকের পেট ও কোমরে ব্যথা হয়। সঙ্গে থাকে ক্লান্তি ও বমির প্রবণতা। এসব কারণে সেই সময়টা আরও কষ্টকর হয়ে ওঠে। তাই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নানা উপায় বেছে নেওয়া হয়। এ সময় ভিটামিন এবং মিনারেল-জাতীয় খাবার খাওয়া জরুরি। সবচেয়ে ভালো হয় যদি প্রাকৃতিক উপায়ে ব্যথা দূর করা যায়।
ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষক ড. কেটি ভিনসেন্ট পিরিয়ডের ব্যথা নিয়ে গবেষণা করে বলেন, ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ নারীর ঋতুস্রাব যন্ত্রণাদায়ক হয়। এর মধ্যে অনেকের যন্ত্রণা এত বেশি হয় যে তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হয়। জরায়ু গঠনকারী টিস্যু থেকে এ সময় এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়, যার কারণে ব্যথা হয়। পিরিয়ডের সময় প্রোস্টাগ্ল্যানডিনস নামে এক ধরনের পদার্থ জরায়ুর পেশিকে সংকুচিত করে এবং প্রদাহ তৈরি করে। ফলে এই সময় ব্যথা হয়।
আসুন জেনে নিই পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমাতে ঘরোয়া উপায়ে যা করবেন-
গরম পানির সেঁক
পিরিয়ডের ব্যথায় গরম পানির সেঁক খুব উপকারী। হট ব্যাগের মধ্যে গরম পানি নিয়ে পেটে সেঁক ও গরম পানি দিয়ে গোসলও করতে পারেন। এটিও আপনার পেটের ব্যথা কমিয়ে স্বস্তি দেবে।
কিছু ভেষজ চায়ে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা পিরিয়ড ক্র্যাম্প এবং পেটের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে। ভেষজ চা যেমন ক্যামোমাইল চায়ের প্রদাহবিরোধী গুণ রয়েছে এবং এটি পেশি শিথিল করতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। পেপারমিন্ট চা ফুলে যাওয়া এবং পেট ব্যথাতেও সহায়তা করতে পারে। আরাম পেতে দিনে দুবার এই চা খেতে পারেন।
আদা
পেটের ব্যথা কমাতে আদার রস বেশ উপকারী। এ সময় আদা চা পান করলে এই সময় বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া টুকরো আদার সঙ্গে মধু, চিনি ও গরম পানি যোগ করে তিন-চারবার পান করতে পারেন।
পেঁপে
পিরিয়ডের ব্যথা রোধের জন্য পেঁপে খাওয়া বেশ কার্যকর। পিরিয়ডের সময় নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খান। কাঁচা পেঁপে পিরিয়ডের ব্যথা কমিয়ে দেয়।
ল্যাভেন্ডার অয়েল
পিরিয়ডের ব্যথার সময় পেটে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল মালিশ করুন। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে এটি আপনার ব্যথা কমিয়ে দেবে অনেকখানি।
জোয়ান
জোয়ানে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফাইবার রয়েছে, যা পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এই সময় অনেকের হজম ক্ষমতা কম থাকে, তাই হজম ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য, কিছুটা জোয়ান গরম পানিতে সেদ্ধ করে নিন। তারপর পানি খেয়ে নিন উপশম পাবেন।
অ্যালোভেরা রস
অ্যালোভেরা রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে একটি জুস তৈরি করে ফেলুন। পিরিয়ডের ব্যথার সময় এটি পান করুন। দিনে কয়েকবার এটি পান করুন। ব্যথা অনেকখানি কমিয়ে দেবে এই পানীয়টি।
পানি ও পানীয় জাতীয় খাবার
পিরিয়ডের সময় প্রচুর পরিমাণ পানি এবং পানিজাতীয় খাবার খান। কেননা এই সময়টায় শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়।
নারিকেল তেল
নারকেল বা তিলের তেলের মালিশ- আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, নারকেল বা তিলের তেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি গুণ ও লিনোলিক অ্যাসিড থাকে। পিরিয়ডের সময় তলপেটে নারকেল বা তিলের তেলে ম্যাসাজ করলে মাংসপেশির মোচড় কমানো যায়। ফলে ব্যথা থেকেও মুক্তি পেতে পারেন।
হালকা ব্যায়াম করুন
ব্যথার কারণে পিরিয়ডের সময় ব্যায়াম করতে পারেন না অনেকে। কিন্তু একটি সমীক্ষা অনুযায়ী সহজ-সরল যোগব্যায়াম, হাঁটাচলা করলে ব্যথা কমতে পারে। তবে এ সময় ভারী কোনও কাজ করা উচিত নয়। ব্যায়াম করার ফলে এন্ডোর্ফিন নিষ্কৃত হয়। যা পেশীর মোচড় কম করার জন্য প্রাকৃতিক ওষুধের কাজ করে।
খাবার
ভিটামিন ই, বি১, বি৬, সি-জাতীয় খাবার, যেমন- চীনাবাদাম, পোস্তবাদাম, আম, কলা, আপেল, মাছ, ডিম, গম, সবুজ সবজি এই খাবারগুলো মাংসপেশির সংকোচন কমিয়ে ব্যথা কমাবে।
শ্বাসের ব্যায়াম
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য শ্বাসের ব্যায়াম একটি দারুণ উপায়। এ ব্যায়াম করতে হলে আপনাকে বুকের ওপর একহাত ও পেটের ওপর আরেক হাত রেখে নাক দিয়ে বড় করে শ্বাস নিতে হবে। এমনভাবে শ্বাস নেবেন যেন বাতাস বুকের গভীরে ঢুকে এবং পেট ফুলে যায়। এরপর এমনভাবে শ্বাস ছাড়ুন যেন আপনি একটি মোমবাতি নেভাচ্ছেন।