মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকায় রাশিয়া থেকে কেনা দুটি হেলিকপ্টার বাংলাদেশ পুলিশে যুক্ত হতে পারছে না। রুশ প্রতিষ্ঠান ‘জেএসসি রাশিয়ান হেলিকপটার্স’ এর সঙ্গে পুলিশের জন্য দুটি হেলিকপ্টার কেনার জন্য সরকারের চুক্তি হয় প্রায় পাঁচ বছর আগে। হেলিকপ্টার পরিচালনার জন্য চার জন পুলিশ কর্মকর্তাকে পাইলট প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও প্রশিক্ষিত জনবল প্রস্তুত করেছে পুলিশ। হেলিকপ্টার দুটি কেনার জন্য ৪২৮ কোটি টাকার মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা ইতিমধ্যে পরিশোধ করেছে। রাশিয়াতে ঐ দুই হেলিকপ্টার তৈরিও হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি টিম রাশিয়ায় গিয়ে হেলিকপ্টার দুটি পর্যবেক্ষণও করে এসেছেন। তবে এতসব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও এখনো আসেনি হেলিকপ্টার দুটি। হেলিকপ্টার দুটি এখন পুলিশের ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে পাঁচ বছর আগে পুলিশে চালু হওয়া ‘এভিয়েশন উইং’ এখন অলস সময় পার করছে। আর সরকারের ৩০০ কোটি টাকা গচ্চা যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কবে নাগাদ হেলিকপ্টার দুটি বাংলাদেশে সরবরাহ করা হবে—জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘এই মুহূর্তে কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই।’ তবে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হেলিকপ্টার সরবরাহ স্থগিত রাখার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজি) চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, জেএসসি রাশিয়ান হেলিকপটার্স কোম্পানির ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) রয়েছে। তাই পুলিশের জন্য সরকার টু সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে কেনা হেলিকপ্টারের সরবরাহ পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের জন্য জিটুজি পদ্ধতিতে ৪২৮ কোটি ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৬ টাকায় রুশ প্রতিষ্ঠান ‘জেএসসি রাশিয়ান হেলিকপটার্স’-এর সঙ্গে ‘এমআই ১৭১-এ২’ মডেলের দুটি হেলিকপ্টার কেনার জন্য দুই দেশের মধ্যে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী দুই কিস্তিতে ২৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ৭৪ হাজার ৫২১ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। অবশিষ্ট টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালানোর জন্য এভিয়েশন উইং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি দুর্গম এলাকাগুলোতে যেখানে সড়কপথে সহজে যাওয়া যায় না, সেখানে দ্রুত যোগাযোগের জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হবে। কিন্তু হেলিকপ্টার না আসায় অপারেশনে যুক্ত হতে পারছে না পুলিশ এভিয়েশন উইং।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ শাখা-৪ এর একজন উপসচিব বলেন, রাশিয়া থেকে দুই হেলিকপ্টার কেনার জন্য ইতোমধ্যে পরিশোধ করা ৩০০ কোটি টাকা ফেরত পাবার কোনো সুযোগ নেই। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগকে চিঠি পাঠানো হবে। তাদেরকে আমরা জানাব যে হেলিকপ্টার দুটি রাশিয়া থেকে ক্রয় করা হচ্ছে, এসব হেলিকপ্টার সামরিক বাহিনীর জন্য নয়, এটি সাধারণ মানুষের জন্য ব্যবহার করা হবে। অন্যদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ইত্তেফাককে জানান, ইতোপূর্বে কো-পাইলট হিসাবে প্রশিক্ষণ নেয়া পুলিশের চার কর্মকর্তাকে র্যাবের এয়ার উইংয়ে পদায়ন করা হয়েছে।