সার্জিল আবতাহীঃ
প্রকৃতির উদার লীলানিকেতন আমাদের এই বাংলাদেশ। এ দেশের বনবাদাড়ে নাম জানা অজানা অসংখ্য পাখির বাস। ‘পাখির কোলাহলে ঘুমভাঙ্গা’- এই কথাটা এক সময় আমাদের মাঝে খুব প্রচলিত ছিল। একটা সময় পাখি ছিল মানুষের নিত্যসহচর। এদেশের প্রচলিত ছড়া কিংবা প্রবাদ-প্রবচনে বিভিন্ন পাখির কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, শুধু মাত্র গত ৩০ বছরে আমরা অর্ধেকের বেশি পাখির প্রজাতি হারিয়ে ফেলেছি।
আমরা যে অতিথি পরায়ণ জাতি- এই কথাটা বোধ হয় পাখিদের সমাজেও প্রচলিত ছিল। প্রতি শীত মৌসুমে অতিথি পাখিদের উপস্থিতিই তা বলে দেয়। অতিথি পাখিদের ইংরেজিতে বলে ‘মাইগ্রেটরি বার্ড’। এর বাংলা অর্থ পরিযায়ী পাখি। এমন পরিযায়ী পাখি আছে প্রায় পাঁচ লাখের মতো। শুধু ইউরোপ আর এশিয়ায় আছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। এসব পাখির মধ্যে প্রায় ১৫০ প্রজাতির পাখি প্রতিবছর আমাদের দেশে বেড়াতে আসে। তারপর কয়েক মাস আমাদের সঙ্গ দিয়ে মার্চএপ্রিলের দিকে ফিরে যায় নিজের দেশে।
“আমরা নিজেদের স্বার্থে প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস করছি। অথচ এই প্রকৃতি ও পরিবেশে বেঁচে থাকার অধিকার এই পাখিদের। আমরা বিকল্প খুঁজে বের করতে পারলেও, পাখিরা পারেনা। কিন্তু পাখির আবাসস্থল ধ্বংস করার আগে আমরা কতজন ভাবি- পাখিদের কী হবে?”
-সার্জিল আবতাহী
কিন্তু, এখানেই আমাদের চরম লজ্জা নিহিত। কেননা আমরা অতিথিপরায়ণ হিসেবে সুপরিচিত হলেও, ওদের সাথে অতিথিসুলভ আচরণ করিনা। বরং অবৈধভাবে শিকার করে “অতিথিভোজন” করছি।
আমাদের নিজস্ব পাখিই বলি আর অতিথি পাখিই বলি, আমরা মানুষেরাই তাদের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার জন্য দায়ী। আমরা নিজেদের স্বার্থে প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস করছি। অথচ এই প্রকৃতি ও পরিবেশে বেঁচে থাকার অধিকার এই পাখিদের। আমরা বিকল্প খুঁজে বের করতে পারলেও, পাখিরা পারেনা। কিন্তু পাখির আবাসস্থল ধ্বংস করার আগে আমরা কতজন ভাবি- পাখিদের কী হবে? খুব সম্ভবত কেউ ভাবিনা। এছাড়া সারা দেশেই রয়েছে চোরাশিকারীরা। দেশের বিভিন্ন পাখি ও কবুতরের হাটে বন্দী অবস্থায় দেখা মেলে অনেক বিপন্ন দেশি পাখি। এই বিলুপ্ত পাখিরা খাঁচায় বেশিদিন বাঁচতে পারেনা, যার কারণে অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
“সরকার এবং সচেতন জনগণ এগিয়ে না আসলে আমরা আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই সকল পাখির প্রজাতি হারিয়ে ফেলব। কিন্তু না, আমরা চাই পাখি বাঁচুক, স্বাধীনভাবে কোলাহল করুক। পাখি আবার করুক রব।”
-সার্জিল আবতাহী
এখনো যে কয়েকটা প্রজাতি টিকে আছে আমরা ইচ্ছে করলে তাদের বাঁচিয়ে রাখতে পারি। আমাদের দেশে পশুপাখি সব কিছুই বন ও পরিবেশ বিভাগের আওতাধীন। পশুপাখি রক্ষায় করণীয় কাজগুলো সব সরকারিভাবে হয়। ফলে কাজগুলি সুষ্ঠুভাবে করা হয় না। আর- যা হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তাই দেশের সচেতন মানুষকে যার যার এলাকা ভিত্তিক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।
বণ্য প্রাণি সংরক্ষণ আইন শুধু কাগজে-কলমে থাকলে চলবে না, সুষ্ঠু প্রয়োগ করতে করতে হবে। অবাধ পাখি শিকার, পরিবহণ, বেচাকেনা- সবই নিরুৎসাহিত করতে হবে। শীত মৌসুমে এক শ্রেণির লোক অতিথি পাখি শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের ভিতর সচেতনতা তৈরি করতে হবে, প্রয়োজনে বিকল্প আয়ের উৎসের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সর্বোপরি সরকার এবং সচেতন জনগণ এগিয়ে না আসলে আমরা আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই সকল পাখির প্রজাতি হারিয়ে ফেলব। কিন্তু না, আমরা চাই পাখি বাঁচুক, স্বাধীনভাবে কোলাহল করুক। পাখি আবার করুক রব।
লেখক কে ফেইসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন
নবধারা/বিএস
One thought on "পাখি আবার করুক রব – সার্জিল আবতাহী"