মো. মোজাম্মেল হক, চারঘাট (রাজশাহী)
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউসুফপুর কৃষি উচ্চ বিদ্যালয় কার্যত জিম্মি হয়ে পড়েছে অফিস সহায়ক আব্দুল হালিমের একচ্ছত্র দাপটে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক হয়রানি, বহিরাগতদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় হস্তক্ষেপ, এবং অতীতের বিষপ্রয়োগের মতো ভয়াবহ অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আজও অক্ষুণ্ন রয়েছে তার প্রভাব।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীর পাড়ে ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন ইউসুফপুর গ্রামে ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউসুফপুর কৃষি উচ্চ বিদ্যালয়। পদ্মার ভাঙনে তিনবার ভবন বিলীন হলেও নতুনভাবে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৩২ জন এবং শিক্ষক রয়েছেন ২১ জন।
১৯৯৫ সালে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পাওয়া আব্দুল হালিম স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় শুরু থেকেই দায়িত্ব পালনের চেয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৯৯৮ সালে দুইজন শিক্ষককে চায়ের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তাকে ৫০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ক্ষমা প্রার্থনার বন্ড দিতে বাধ্য করা হয়। এরপর থেকে শিক্ষকরা তার কাজ অন্য স্টাফদের দিয়ে চালিয়ে আসছিলেন।
তবে গত কয়েক বছর ধরে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সরকারি চাকরির নিয়ম লঙ্ঘন করে তিনি রাজশাহী টেনিস কমপ্লেক্সে নৈশ প্রহরী হিসেবেও কর্মরত রয়েছেন। সেখান থেকে রাতের ডিউটি শেষে এসে বিদ্যালয়ে তালা খুলে ঘুমিয়ে পড়েন। কেউ কিছু বলতে গেলে হুমকি-ধামকি এবং মারধরের মতো ঘটনা ঘটে।
২০২৫ সালের ৬ আগস্ট তিনি বহিরাগতদের নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষের তালা ভেঙে ভাঙচুর চালান এবং অফিসরুমের কাগজপত্র প্রকাশ্যে পুড়িয়ে দেন। পরবর্তীতে তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নামে মিথ্যা মামলা করানোর চেষ্টাও করেন। তবে তদন্তে প্রমাণিত হয় মামলাগুলো মিথ্যা, এবং পিবিআই তদন্ত শেষে তা বাতিল হয়।
সাবেক প্রধান শিক্ষক ইমদাদুল ইসলাম বলেন, “অবসরের আগেও এবং পরে সে আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেছে। না হলে সম্মানহানি ঘটাবে বলেছে।”
বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি মামুনুর রশীদ বলেন, “সে আমাকে পর্যন্ত সম্মান দেয় না, একজন সভাপতিকে যদি সে পাত্তা না দেয়, তাহলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কী অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়।”
বর্তমান প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “প্রতিদিনই বহিরাগতরা এসে বিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তাদের বেশিরভাগের সাথেই আব্দুল হালিমের সখ্যতা রয়েছে। বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে।”
অভিভাবক সেলিম রেজা জানান, “আমার ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ক্লাস শুরু হতে দেরি হয় কারণ হালিম সময়মতো তালা খোলে না। বাধ্য হয়ে শিক্ষকরা তার বাড়ি থেকে চাবি এনে রুম খোলেন।”
অভিযোগের বিষয়ে আব্দুল হালিম বলেন, “দুই শিক্ষককে কৌতুহলবশত চায়ের সঙ্গে ট্যাবলেট মিশিয়ে খাওয়াতে চেয়েছিলাম। এটা ভুল ছিল। আর দুই জায়গায় চাকরি করাটা অনিয়ম নয়। বিদ্যালয়ে অনিয়ম দেখলে প্রতিরোধ করা আমার দায়িত্ব।”
চারঘাট উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. রাহেদুল ইসলাম বলেন, “একসাথে দুই স্থানে চাকরি করা আইনগতভাবে সম্ভব নয়। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.