রুহুল আমিন, যশোর প্রতিনিধি
টানা বৃষ্টিতে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে দেশের অন্যতম রেণু উৎপাদনকারী অঞ্চল যশোর। জুন-জুলাই মাসজুড়ে ভারি বর্ষণে অক্সিজেনের স্বল্পতা ও পুকুর তলিয়ে যাওয়ার কারণে হ্যাচারিগুলোতে ব্যাপক হারে রেণু পোনা মারা গেছে। এতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, যশোর জেলার চাঁচড়া অঞ্চলকে কেন্দ্র করে প্রায় ১০০টির বেশি হ্যাচারি রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত রেণু পোনা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। তবে চলতি বর্ষা মৌসুমে দীর্ঘদিনের টানা বৃষ্টিতে হ্যাচারিগুলোতে চরম সংকট দেখা দেয়। অতিরিক্ত পানিতে হ্যাচারির পাশের মাঝারি পুকুরগুলো তলিয়ে যাওয়ায় রেণু পোনা স্থানান্তর করা সম্ভব হয়নি। ফলে হ্যাচারির মধ্যে অক্সিজেনের ঘাটতিতে লাখ লাখ রেণু পোনা মারা গেছে।
লুলু হ্যাচারির মালিক সেকেন্দার লুলু বলেন, “এবারের বর্ষায় আমার ৫০ লাখ টাকার রেণু পোনা নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েক বছর ধরে লাভ হচ্ছে না, এবার হয়তো ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে।”
চৌধুরী ফিস হ্যাচারির মালিক সুমন চৌধুরী জানান, “রেণু পোনা জন্মের এক সপ্তাহের মধ্যে মাঝারি পুকুরে স্থানান্তর করতে হয়। কিন্তু এবার সব পুকুর তলিয়ে গেছে, পোনা ফেলা যায়নি। এতে আমার প্রায় এক কোটি টাকার রেণু নষ্ট হয়েছে।”
রিতা মৎস্য হ্যাচারির মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, “পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে রেণু চাষে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটেছে। আমার প্রায় ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।”
যশোর জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি জাহিদুর রহমান গোলদার বলেন, “আমাদের দেশে ছয় ঋতু থাকলেও এখন শুধু গরম আর শীত দেখা যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সরাসরি রেণু উৎপাদনে পড়ছে। এবারের টানা বর্ষায় হ্যাচারিগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, ৫০ কোটি টাকার বেশি রেণু পোনা নষ্ট হয়েছে।”
সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার ঘোষ বলেন, “বৃষ্টির কারণে পুকুরে অক্সিজেন ঘাটতি দেখা দেয়। বড় মাছের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া গেলেও রেণু পোনা রক্ষা করা কঠিন। এটি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কারো দায় নয়।”
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, “বৃষ্টির কারণে হ্যাচারি মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। মৎস্য অফিস থেকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।