রিপন হোসেন সাজু, মনিরামপুর (যশোর)
যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে মনিরামপুরের রাজনৈতিক অঙ্গন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা সাংগঠনিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মন জয় করতে এবং তাদের কাছাকাছি আসার নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই কেউ না কেউ সভা-সেমিনারসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন।
অপরদিকে, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও সম্ভাব্য প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ ও আলোচনায় ব্যস্ত। ৩ লাখ ৭৮ হাজার ভোটারের এই আসন থেকে আগামী নির্বাচনে কে প্রতিনিধিত্ব করবেন, তা নিয়েই চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
মনিরামপুরবাসীর দীর্ঘদিনের সমস্যা ‘অভিশপ্ত ভবদহ’ ইস্যুটিও নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনায় মুখ্য হয়ে উঠেছে। এ আসনে আগামী নির্বাচনের জন্য মূলত ছয়জন সম্ভাব্য প্রার্থীকে সক্রিয়ভাবে মাঠে দেখা যাচ্ছে।
অ্যাডভোকেট শহীদ মোঃ ইকবাল হোসেন
তিনি দীর্ঘদিন ধরে মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১৯৯০ সাল থেকে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ভালোবাসা অর্জন করেছেন। তিনি দুইবার পৌর মেয়র এবং একবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং এরইমধ্যে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক তিনি যশোর জেলা জামায়াতে ইসলামের কর্ম পরিষদের সদস্য এবং দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নিয়মিত সভা-সেমিনার ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সংগঠনের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের গ্রুপিং ছাড়াই একক প্রার্থী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সম্মানজনক ভোট পেয়েছিলেন।
মোহাম্মদ মুছা তিনি মনিরামপুর বিএনপির একজন বর্ষীয়ান নেতা। ১৯৭৮ সাল থেকে সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি হিসেবে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর দলের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে পরাজিত হন। ১৯৮৯ সালে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। বর্তমানে জেলা বিএনপির সদস্য হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন এবং দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
মুফতি আব্দুর রশিদ তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। তিনি বিএনপি জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন। গত ৫ জুলাই মনিরামপুরে এক সমাবেশে দলের মহাসচিব ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম তাকে প্রার্থী ঘোষণা করেন। তিনি প্রয়াত মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের ছেলে, যিনি এ আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং হুইপ ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।ইফতেখার সেলিম অগ্নি তিনি যশোর জেলার সাবেক ছাত্রদল নেতা। ১৯৯১-৯৬ সাল পর্যন্ত দপ্তর সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে জেলা যুবদলের আহ্বায়ক হন এবং বর্তমানে কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলে রয়েছেন। তিনিও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং নিয়মিত গ্রামে গ্রামে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
মোঃ আসাদুজ্জামান মিন্টু তিনি মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। ছাত্রদল ও যুবদলের নেতৃত্ব দিয়ে বর্তমানে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করবে।
যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের আগামী সংসদ নির্বাচনটি এক তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াইয়ে রূপ নিতে যাচ্ছে। ছয়জন সম্ভাব্য প্রার্থী ইতোমধ্যেই সক্রিয়ভাবে নির্বাচনী মাঠে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে কাজ শুরু করেছেন। যতই ভোটের দিন ঘনিয়ে আসবে, ততই নির্বাচনী উত্তাপ আরও বাড়বে। তবে শেষ পর্যন্ত কারা টিকবেন, তা সময়ই বলে দেবে।