কোটালীপাড়া প্রতিনিধিঃ
প্রায় তিন দশক ধরে কোরবানির সময় গরু বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রামের খামারীরা। কিন্তু এ বছরের পরিস্থিতি ভিন্ন। অন্যান্য বছর কোরবানির এক থেকে দেড় মাস আগে গরু ক্রয়ের বেপারীরা এসে বায়না দিয়ে যেত। এ বছর করোনার কারণে এখন পর্যন্ত কেহই গরু কিনতে আসেনি। যার ফলে এই গ্রামের ছোট বড় শতাধিক খামারী গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
সোনাখালী গ্রামটি বিল এলাকায় অবস্থিত। বছরের প্রায় ৯ মাস এ গ্রামটি জলমগ্ন থাকে। বর্ষার সময় এলাকায় কোনো কাজ থাকে না। তাই ওই গ্রামের মানুষ দশকের পর দশক ধরে হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু পালন করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। এই গ্রামের খামারের গরুগুলোকে প্রাকৃতিক ভাবে উৎপাদিত ঘাস খাওয়াইয়ে পালন করা হয়। যার জন্য এ গ্রামের খামারের গরুগুলোর কোটালীপাড়াসহ এর আশপাশের উপজেলায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
এ বছর এ গ্রামের শতাধিক ছোট বড় খামারে ৭শতাধিক গরু রয়েছে। কোরবানি ঈদের আর কয়েকদিন বাকি থাকলেও এই গ্রামের কোন খামারীর একটি গরুও এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়নি। যার ফলে খামারীদের মধ্যে এক ধরণের হতাশা বিরাজ করছে।
সোনাখালী গ্রামের খামারী সিদ্দিক গাজী (৬০) নবধারা কে নবলেন, গত ২০ বছর ধরে গরু পালন করি। প্রতিবছর কোরবানি ঈদের আগে গরু বিক্রি করে আবার নতুন করে গরু ক্রয় করি। গত বছর কোরবানির ইদের পরে ৫লক্ষ টাকা দিয়ে ৭টি গরু ক্রয় করেছি। বিগত এক বছর ধরে এই ৭টি গরু আমি লালন পালন করছি। আমার এই গরু পালনে আমাকে কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে হয়েছে। কোরবানির আর কয়েকদিন বাকি রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি করতে পারিনি।
খামারী মোশারফ গাজী (৫২) নবধারা কে বলেন, প্রতি বছর আমরা প্রায় খামারীই বাড়িতে বসে গরু বিক্রি করে ফেলি। এ বছর এখন পর্যন্ত কোন বেপারী গরু কিনতে বাড়িতে আসেনি। অন্যদিকে করোনার কারণে কোথায়ও কোন গরুর হাট বসেনি। এখন আমরা গরুগুলো নিয়ে কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা। আমাদের গ্রামের অধিকাংশ খামারী ধার দেনা করে এই গরুর খামার করেছেন। এরা যদি গরুগুলো বিক্রি করতে না পারে তাহলে এদের অর্থ সংকটে পড়তে হবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ কুমার দাশ বলেন, সোনাখালী গ্রামের খামারীরা আমাদের কাজ থেকে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে গরু পালন করছেন। এখানকার অধিকাংশ গরুগুলোকে প্রাকৃতিক ভাবে লালন পালন করা হয়। অন্যান্য বছর এ গ্রামের খামারীরা গরু বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। এরা যদি এ বছর এই গরু বিক্রি করে লাভবান না হতে পারে তাহলে আগামীতে এরা গরু পালনে আগ্রহী হারাবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাহফুজুর রহমান নবধারা কে বলেন, গরুর হাট বসানোর ব্যাপারে আমরা এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা পাইনি। যদি নির্দেশনা পাই তাহলে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে হাট বসানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। যদি কোন ভাবে হাট বসানো সম্ভব না হয় তাহলে অনলাইনে গরু ক্রয় বিক্রয়ের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।