দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধির ফলে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে চরাঞ্চলের চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, পদ্মার পানি বর্তমানে বিপদসীমার মাত্র ৯০ সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে আগামী এক-দু’দিনের মধ্যেই বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত ১০ দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে পদ্মা নদীর পানি প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ভাগজোত পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৪.৭২ সেন্টিমিটার, যেখানে বিপদসীমা ১৫.৭০ সেন্টিমিটার। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টেও একই অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে।
চরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে নিচু এলাকার বসতবাড়িতেও।
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান জানান, চরাঞ্চলের গ্রামগুলো মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
রামকৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল জানান, নদীর ওপারের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের অধিকাংশই এখন পানিবন্দী। মাঠের মরিচ, ধান, পাট, সবজি ও কলার ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
এদিকে, দৌলতপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুশতাক আহম্মেদ জানান, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ১৩টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে এসব স্কুল খোলা থাকবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বন্যার পানিতে প্রায় ৫০০ হেক্টর ফসলি জমির মরিচ, রোপা আউশ, ভুট্টা, কলা ও সবজি নষ্ট হয়ে গেছে।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে উপজেলার অন্তত ৪টি ইউনিয়নের মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছে। চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া, শুকনো খাবার সরবরাহসহ দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে।