মোঃ ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার ৩ নম্বর খানপুর ইউনিয়নের পান্নাথপুর গ্রামে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হান্নান মণ্ডলের ছেলে মাসুদ রানার একটি গাভীন গরুকে কয়েকদিন আগে কুকুরে কামড় দেয়। এরপর থেকে গরুটি অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে নিজের মাথা দেয়ালে আঘাত করা, চোখ উল্টে যাওয়া, খাবার না খাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে গরুটি মৃত্যুর মুখে পতিত হলে পাশের উপজেলার কয়েকজন কসাইয়ের সহযোগিতায় কোন পশু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই বাড়িতেই জবাই করা হয়।
জবাইয়ের সময় গরুর পেটে একটি ৮ মাসের বাছুর বের হয়ে আসে। পরে গরুর মাংস বস্তাবন্দি করে ফুলবাড়ী বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে একটি ভ্যানে করে নেওয়া হচ্ছিল। স্থানীয়রা বিষয়টি সন্দেহজনক মনে করে ভ্যান থামিয়ে দেখলে ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যায়।
খবর পেয়ে বিরামপুর থানা পুলিশের এসআই বকুল ঘটনাস্থলে গিয়ে মাংস জব্দ করে মাটিতে পুঁতে দেন।
এলাকাবাসী জানান, গরুটি আগে থেকেই অসুস্থ ছিল। কুকুরে কামড়ানো ও গর্ভবতী রোগাক্রান্ত গরুর মাংস মানুষের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তবুও জবাই করে মাংস বিক্রির চেষ্টা করা হয়েছে, যা জনস্বার্থবিরোধী।
ঘটনাটি প্রকাশ পাওয়ার পর অভিযুক্তরা এক ব্যক্তির মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এলাকাবাসী জানান, ওই ব্যক্তি নিজেকে জেলার নামকরা পত্রিকার প্রতিনিধি পরিচয় দিলেও প্রকৃতপক্ষে নিজের নামটিও সঠিকভাবে লিখতে পারেন না। অথচ তিনি দীর্ঘদিন ধরে জেলা প্রতিনিধির ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ওই ব্যক্তি বিভিন্ন ছত্রছায়ায় অপকর্ম চালিয়ে আসছে। কখনো রাজনৈতিক পরিচয়, কখনো সাংবাদিকতার ভুয়া কার্ড দেখিয়ে প্রভাব খাটানো, চাঁদাবাজি ও অনৈতিক সুবিধা নেওয়াই তার মূল কাজ। এর ফলে এলাকায় প্রকৃত সাংবাদিকতার সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে।
বিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপুল কুমার চক্রবর্তী বলেন, কুকুরে কামড়ানো বা রোগাক্রান্ত গরু জবাই সম্পূর্ণ আইনবিরোধী এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। এটি Food Safety Act, Animal Slaughter Act এবং Penal Code অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই ধরনের মাংস খেলে রেবিসসহ প্রাণঘাতী রোগ ছড়াতে পারে।
এলাকাবাসীর দাবি, এ ধরনের অনৈতিক ও জনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যাক্তি ও কসাইদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে তারা বারবার ছত্রছায়া খুঁজে নিয়ে অপকর্ম চালিয়ে যাবে।