রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
খুলনা সিটি করপোরেশনে (কেসিসি) মশা নিধনে ব্যবহৃত ওষুধ সরবরাহে চরম অনিয়ম ও নিম্নমানের অভিযোগ উঠেছে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, কেসিসির সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে প্রতিষ্ঠান দুটি বছরের পর বছর মানহীন ওষুধ সরবরাহ করে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
সম্প্রতি ই-জিপি টেন্ডারের মাধ্যমে ঢাকার দিনা এন্টারপ্রাইজ খুলনা সিটি করপোরেশনে সাইপার মেথ্রিন ও লার্ভিসাইড সরবরাহের কার্যাদেশ পায়। ৩১ আগস্ট কেসিসির গ্যারেজে ফগার মেশিন ব্যবহার করে সাইপার মেথ্রিন ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ওষুধের কোনো কার্যকারিতা না থাকায় প্রায় তিন হাজার লিটার ওষুধ ফেরত পাঠানো হয়।
দিনা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সরফুদ্দিন টিপু দাবি করেন, এর আগেও তিনি সর্বনিম্ন দরদাতা হলেও কার্যাদেশ পাননি। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ওষুধের পরীক্ষার সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি এবং পুরো টেন্ডার প্রক্রিয়া একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি জানান, প্রক্রিয়াটি এমনভাবে পরিচালিত হচ্ছে যেখানে যে প্রতিষ্ঠান যত বেশি ‘ম্যানেজ’ করতে পারে, সে-ই কাজ পায় সহজে।
অপরদিকে, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ড. মাহবুবুর রহমানের মালিকানাধীন এমআর এন্টারপ্রাইজ দীর্ঘ আট বছর ধরে কেসিসিতে মশা মারার ওষুধ সরবরাহ করে আসছে। তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও দীর্ঘদিন ধরে একক আধিপত্য, দরপত্রে কারচুপি এবং নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহকৃত ওষুধও একাধিকবার মানহীন প্রমাণিত হয়েছে এবং অন্তত একবার ওষুধ ফেরত পাঠাতে বাধ্য হয় কেসিসি।
কেসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কোহিনূর জাহান জানান, দিনা এন্টারপ্রাইজের প্রথম দফার সরবরাহ মানসম্মত না হওয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তী দফার সরবরাহ কিছুটা কার্যকর ছিল বলে জানান তিনি। এদিকে, কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আসিফ রহমান জানিয়েছেন, মশার ওষুধ গ্রহণের ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে ও পরীক্ষাগারে দুই স্তরে সফলভাবে মান পরীক্ষা করেই ওষুধ গ্রহণ করা হবে।
মশা নিধনে অনিয়ম ও অকার্যকর উদ্যোগের কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছে নগরবাসী। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় খুলনার পিকচার প্যালেস মোড়ে নাগরিকরা ‘মশারি মিছিল’ করে প্রতিবাদ জানান। তবে কেসিসি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ এর রয়েছে।
খুলনা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আ ফ ম মহাসীন দাবি করেন, মশক নিধন কার্যক্রমে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সক্রিয়ভাবে জড়িত। নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার জানান, কেসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডে মাত্র একজন কর্মচারী রয়েছে এবং শহরজুড়ে মাত্র ৫৪টি ফগার মেশিন দিয়ে কার্যকর মশা নিধন কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়। জনবল সংকট ও অব্যবস্থাপনার কারণে পুরো কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে বলে মনে করেন তিনি।
নগরবাসী মনে করছে, মশক নিধন কার্যক্রমে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও মানহীন ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে একটি স্বচ্ছ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। একইসঙ্গে ওষুধ পরীক্ষার জন্য নিরপেক্ষ ল্যাব ব্যবস্থাপনা এবং জবাবদিহিমূলক প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলারও দাবি উঠেছে।