স্টাফ রিপোর্টার,নড়াইল
শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতনে স্বামী সংসার করতে পারছেন না গৃহবধু লায়লা খানম ও নীলিমা ইয়াসমিন। তাদের অভিযোগ, শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতনে স্বামী সংসার ছেড়ে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন তারা। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার জালালসি গ্রামের রশীদ শেখের মেয়ে লায়লা জানান, প্রায় তিন বছর আগে মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার হাটবাড়িয়া গ্রামের হানিফ মোল্যার ছেলে নাছিরের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
বিয়ের প্রায় ৫ মাস পর থেকে লায়লার ওপর শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন শুরু হয়। লায়লাকে প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন তারা। এমনকি শ্বশুর হানিফ মোল্যা পুত্রবধূ লায়লাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ করেন লায়লা।
বিষয়টি লায়লা তার স্বামী নাছিরকে জানালেও কোনো কথা গুরুত্ব না নিয়ে তাকে (লায়লা) আজেবাজে কথা বলেন। এদিকে, বিয়ের প্রায় দুই বছর পর স্বামী নাছির বিদেশে (ইরাক) চলে যান। নাছির বিদেশ যাওয়ার পর শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন আরো বেশি শুরু হয়। তাদের (শ্বশুর-শাশুড়ি) নির্যাতনের কথা লায়লা মোবাইল ফোনে নাছিরকে জানালে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, বাবা-মায়ের নির্যাতন সহ্য করে ঘরসংসার করলে এখানে (শ্বশুরবাড়ি) থাকবে, না হলে বাবার বাড়ি চলে যাবে। এরপর লায়লা প্রায় সাত মাস আগে বাবার বাড়ি নড়াইলের জালালসি গ্রামে চলে আসেন।
লায়লা আরো জানান, বিয়ের পর থেকে স্বামী নাছির তার ভরপোষণ দিতে অনীহা প্রকাশ করেন। ঈদ বা আনন্দ-উৎসবসহ কোনো সময়ই তাকে একটি পোশাক পর্যন্ত কিনে দিতে আগ্রহী নয় নাছির। এছাড়া বিদেশ চলে যাওয়ার পর লায়লার সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন নাছির। লায়লা ফোন করলেও নাছির কোনো সময়ই সাড়া দেন না। প্রায় চার মাস লায়লার সঙ্গে নাছির একেবারেই যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে লায়লা স্বামী সংসার ছেড়ে বাবার বাড়ি কষ্টে জীবনযাপন করছেন। প্রায় সাত বছর আগে বাবা রশীদ শেখ মারা যাওয়ায় আর্থিক সমস্যার কারণে বাবার বাড়ি থেকেও কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছেন লায়লা। শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন এবং স্বামীর অবজ্ঞা-অবহেলার ঘটনায় লায়লা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে লায়লা ও তার মা জরিনা বেগম জানান, নাছিরকে বিদেশ পাঠাতে তিন লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিয়ের সময় দুই ভরি স্বর্ণালংকার দেয়া হয়। সেই স্বর্ণালংকারও লায়লার শাশুড়ি আঞ্জুয়ারা বেগম রেখে দিয়েছেন।
অপরদিকে হানিফ মোল্যার বড় পুত্রবুধূ নীলিমা ইয়াসমিন বলেন, প্রায় সাত বছর আগে জাহিদ মোল্যার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে চার বছরের একটি মেয়ে সন্তান আছে। প্রায় দুই বছর আগে জাহিদ বিদেশে (কুয়েত) চলে যায়।
তবে, বিয়ের প্রায় এক বছর পর থেকেই নীলিমার সঙ্গে জাহিদ ও তার বাবা-মা বাজে আচরণ করতে থাকেন। তবুও সংসার টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করেন নীলিমা। তবে, স্বামী বিদেশ চলে যাওয়ায় পুত্রবধূকে বাড়ি ছাড়া করতে নানা অপকৌশল অবলম্বন করেন শ্বশুর হানিফ মোল্যা। একপর্যায়ে প্রায় সাত মাস আগে বাবার বাড়ি চলে যান নীলিমা।
তিনি (নীলিমা) জানান, তার স্বামী বিদেশ থেকে ইমোতে তাকে অনেক বাজে কথা লিখে পাঠায়। এর মধ্যে কিছু সংগ্রহে আছে। আর বেশির ভাগ জাহিদ মুছে দিয়েছে। জাহিদ তার স্ত্রীকে লিখেছেন, ‘আমি ছাড়লে মানুষ আমাকে খারাপ বলবে, এমন কাজ করব তুই নিজেই ছাড়তে বাধ্য হবি।’ নীলিমা লিখেছেন, মেয়েটার কথা একটু ভাবো। জাহিদ আবার লিখেছেন, ‘তোমার সাথে এমন ব্যবহার করব তুমি নিজেই আমাদের ডিভোর্স দিতে বাধ্য হবা কিংবা গলায় দড়ি নিয়ে মরতে বাধ্য হবা।’ নীলিমা উত্তরে লিখেছেন-‘আমি মরলে তুমি খুশি’। স্বামী জাহিদের উত্তর-‘হুম’।
নীলিমা বলেন, বিয়ের পর যৌতুকের টাকার জন্য জাহিদ আমাকে ব্যাপক মারধর করেছে। একপর্যায়ে বাবার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা জাহিদকে দেয়া হয়। এছাড়া বিদেশ যাওয়ার জন্য আবারো টাকার দাবি করেন তারা। প্রায় দুই বছর আগে আমার ব্যবহৃত দুই ভরি স্বর্ণালংকার বিক্রি করে জাহিদ বিদেশে চলে যায়। এমনকি আমার শিশু সন্তান মারিয়ামের কানের দুল, চেইন ও নূপুর পর্যন্ত চলতি বছরের জানুয়ারিতে শ্বশুর-শাশুড়ি কেড়ে নেয়। এ সময় আমার গলায় ছুরি ধরে দু’টি ফোন ছিনিয়ে নেয়।
নীলিমা বলেন, আমার প্রতি শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন এবং স্বামীর এমন বাজে আচরণের বিচার চাই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হানিফ মোল্যা বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা ঠিক নয়। তারা ষড়যন্ত্র করছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.