তৌহিদুল ইসলাম জিসান, নাজিরপুর প্রতিনিধিঃ
আজ ২৮ জুলাই প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের সুন্দরবন সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী।২০১৭ সালে ২৮ জুলাই মুক্তিযুদ্ধে কিংবদন্তি সেনা নায়ক সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ৬৮ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
মরহুমের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার জন্মভূমি পিরোজপুরে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলে এ দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। মরহুমের প্রতিষ্ঠিত আফতাব উদ্দিন কলেজের উদ্যোগে গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে সকাল ১০টায় কলেজ প্রাঙ্গণে মরহুমের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, পারিবারিক জামে মসজিদে কোরআন খতম ও দোয়া ও মোনাজাতসহ শহরের বিভিন্ন মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে তার সহধমির্ণী কানিজ মাহমুদা আহমেদ এবং ছোট ভাই দুবলা ফিশার মেন গ্রুপের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন আহমেদ মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী মেজর জিয়াউদ্দিন ১৯৫০ সালে পিরোজপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার আপন চাচাতো ভাই। তিনি ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।
১৯৬৮ সালে তিনি পিরোজপুর মহকুমা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ১৯৬৯ সালে জিয়াউদ্দিন পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন।
১৯৭০ সালের শেষ দিকে কমিশন লাভ করেন তিনি। ১৯৭১ সালের ২০ মার্চ ছুটি নিয়ে লাহোর থেকে দেশে চলে আসেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ৯ম সেক্টরের সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হন। সুন্দরবনে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি যুদ্ধে অংশ নেন।
১৯৭৫ সালে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত ছিলেন জিয়াউদ্দিন। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর মেজর পদে থাকা অবস্থায় জিয়াউদ্দিন চাকরিচ্যুত হন। পরে তিনি সুন্দরবনে অবস্থান নিয়ে জাসদের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে সুন্দরবনে সেনা অভিযানে মেজর জিয়াউদ্দিন গ্রেফতার হন।এ নিয়ে তখন সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা আন্দোলন শুরু করলে আ স ম আবদুর রব, মেজর জলিলসহ অন্যদের সঙ্গে তিনিও ১৯৮০ সালে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি লাভ করেন।
১৯৮৩ সালে জেনারেল এরশাদের সময় মেজর জিয়াউদ্দিন দেশ ছেড়ে আশ্রয় নেন সিঙ্গাপুরে।১৯৮৯-৯১ সালে তিনি পিরোজপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।১৯৯৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তিনি ‘সুন্দরবন বাঁচাও’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলেন।স্থানীয়ভাবে তাকে ডাকা হতো সুন্দরবনের ‘মুকুটহীন সম্রাট’ নামে।
মৎস্যজীবীদের সংগঠন দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন সুন্দরবন এলাকায় ডাকাত নির্মূল অভিযানেও সক্রিয় ছিলেন। ২০১৩ সালে বনদস্যুদের গুলিতে তিনি আহতও হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সুন্দরবনের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে তিনি ‘সুন্দরবন সমরে ও সুষমায়’ নামে একটি বইও লিখেছেন।