খুলনা প্রতিনিধি
বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৫ উপলক্ষে তেরখাদা উপজেলা যেন খুঁজে পেল এক আলোকবর্তিকাকে—তিনি অনন্যা সরকার। পেশাগত নিষ্ঠা, মানবিক মূল্যবোধ আর শিক্ষার্থীদের প্রতি ভালোবাসা দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন, শিক্ষকতা শুধুই একটি পেশা নয়, এটি একটি ব্রত।
উপজেলার ১০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫৫০ জন সহকারী শিক্ষক কর্মরত থাকলেও, তাদের ভেতর থেকে অনন্যা সরকারকেই নির্বাচিত করা হয়েছে শ্রেষ্ঠ গুণী শিক্ষক হিসেবে। উপজেলা পর্যায়ে আয়োজিত গুণী শিক্ষক সম্মাননা কর্মসূচিতে তাঁর এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে—সত্যিকারের নিবেদিত শিক্ষকই পারেন পরিবর্তনের আলো ছড়াতে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, গুণী শিক্ষক নির্বাচনে যে ১৩টি মানদণ্ড বিবেচনায় নেওয়া হয়, তার সবগুলোতেই এগিয়ে ছিলেন অনন্যা সরকার। শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে শুরু করে নৈতিকতা, পেশাগত দক্ষতা, একাডেমিক উৎকর্ষ, বিজ্ঞানমনস্কতা, ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক—সব ক্ষেত্রেই রয়েছে তাঁর মেধা, শ্রম আর ভালোবাসার ছাপ।
২০১৮ সালে বদলির মাধ্যমে তিনি যোগ দেন ১০ নম্বর পশ্চিম কাটেঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই স্কুলই হয়ে ওঠে তাঁর দ্বিতীয় পরিবার। সহকর্মীদের সহযোগিতা আর শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরি করেছেন একজন আদর্শ শিক্ষকের রূপে। অনন্যা বলেন, “আমার এই অর্জন একার নয়। এটি আমার স্কুল পরিবার, সহকর্মী এবং প্রতিটি শিক্ষার্থীর সম্মিলিত সাফল্য।”
তিনি আরও বলেন, “আমি প্রতিনিয়ত শিখি আমার ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে। ওদের চোখে আমি দেখি সম্ভাবনার আলো, স্বপ্নের স্পন্দন। তাই প্রতিটি ক্লাস, প্রতিটি পাঠ আমার কাছে নতুন এক যাত্রা।”
শিক্ষক দিবসে প্রতিবছর একজন সহকারী শিক্ষককে শ্রেষ্ঠ গুণী শিক্ষক হিসেবে নির্বাচনের এই প্রক্রিয়া শুধু একজন শিক্ষককে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয় নয়—এটি একজন শিক্ষকের পেশাদারিত্ব, আদর্শ, এবং সমাজে তাঁর প্রভাবকে সম্মান জানানো। সংশ্লিষ্টদের মতে, এই স্বীকৃতি ভবিষ্যতের শিক্ষকদের অনুপ্রাণিত করবে, আরও দায়িত্বশীল করে তুলবে শিক্ষা-দায়িত্ব পালনে।
অনন্যা সরকারের এই সম্মাননা প্রমাণ করে, সঠিক দিকনির্দেশনা, আন্তরিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ থাকলে একজন শিক্ষক যেমন সমাজকে বদলে দিতে পারেন, তেমনি হয়ে উঠতে পারেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ।