রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে খুলনা বিভাগ যেন এক উৎসবের শহর নয়—একটি মহাউৎসবের জনপদ। ঢাক-কাসরের তালে ভেসে যাওয়া প্রতিটি পূজামণ্ডপে এখন মঙ্গল আর শুভ্রতার চিত্ররেখা।
খুলনা বিভাগের ১০টি জেলা ও মহানগর মিলে এবার সর্বমোট ৪ হাজার ৮১১টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুর্গাপূজা। তবে সম্প্রতি ঝিনাইদহের শৈলকুপায় দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় প্রশাসন ব্যাপক সতর্কতা অবলম্বন করেছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে প্রতিটি পূজামণ্ডপ।
খুলনা রেঞ্জ পুলিশের তথ্যমতে, বিভাগে ৪ হাজার ৬৯১টি পূজামণ্ডপ ও খুলনা মহানগরীতে ১২০টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৭৪৭টি মণ্ডপকে ‘অধিক গুরুত্বপূর্ণ’ এবং ১ হাজার ৭১২টিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ঘোষণা করে সর্বোচ্চ নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল হক (পিপিএম) ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর বলেন, “শৈলকুপার ঘটনা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। এটা কেবল ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত নয়, দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার ওপরও আঘাত। আমরা প্রতিটি মণ্ডপে সমান গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা দিচ্ছি।”
তিনি জানান, পূজার পাঁচদিন—ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশ মোতায়েন থাকবে এবং আনসার সদস্যরা থাকবেন ছয়দিনব্যাপী। প্রতিটি জেলায় নির্ধারিত হয়েছে ফোকাল পয়েন্ট, সার্বক্ষণিক মনিটরিং সেল এবং গঠন করা হয়েছে কুইক রেসপন্স টিম। প্রয়োজনে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা তৎপরতা ও অতিরিক্ত টহল জোরদার করা হয়েছে।
খুলনা রেঞ্জ পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, “আমরা সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত। পূজা নির্বিঘ্ন রাখতে পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে সম্মিলিত নিরাপত্তা বলয়।”
পূজামণ্ডপে প্রবেশ ও প্রস্থানপথে বসানো হয়েছে মেটাল ডিটেক্টর, স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। কোনো রকম অপতৎপরতা রোধে গোপন নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। গোটা রেঞ্জে একযোগে কাজ করছে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, প্রশাসন ও স্থানীয় পূজা উদযাপন কমিটি।
খুলনা জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান জানান, “দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়, এটি বাংলাদেশের একটি জাতীয় সংস্কৃতি ও সহাবস্থানের প্রতীক। আমরা পূজার পাঁচদিন সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রাখছি, মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চলছে, এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত টহল জোরদার করা হয়েছে।”
তিনি জানান, পূজার পর প্রতিমা বিসর্জনের জন্য খুলনা মহানগরীর পাঁচটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে—জেলখানা ঘাট, চরেরহাট, রেলিগেট নগরঘাট, দৌলতপুর লঞ্চঘাট ও দধি বামনঘাট। এসব স্থানে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও জলপথে নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পূজামণ্ডপগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে নির্ধারিত করা হয়েছে পর্যবেক্ষক কর্মকর্তাদের। থানা পর্যায়ে ওসিদেরকে দেওয়া হয়েছে ‘রেসপন্ডার’ দায়িত্ব। যে কোনো ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ ও আনসার।
সব মিলিয়ে খুলনা বিভাগে এবার দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের নয়, বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল বার্তা। প্রশাসনের এই নজিরবিহীন প্রস্তুতি জনমনে তৈরি করেছে নিরাপত্তা ও আস্থার দেয়াল। পূজার প্রতিটি মুহূর্ত হোক আনন্দময়, নিরাপদ এবং শুদ্ধতায় পূর্ণ—এটাই প্রত্যাশা খুলনার সর্বস্তরের মানুষের।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.