রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
শরতের আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের দল, মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে কাশফুলের শুভ্রতা। প্রকৃতির এই নান্দনিক পরিবেশে তেরখাদা উপজেলার মণ্ডপে মণ্ডপে বইছে দুর্গোৎসবের আনন্দধারা।
ছয়টি ইউনিয়নে ৯৮টি পূজামণ্ডপে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা, যা পরিণত হয়েছে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের পাশাপাশি সামাজিক সম্প্রীতির অনুপম মিলনমেলায়। গত রবিবার মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হয় পূজার মূল আয়োজন। এর পরদিন মহাসপ্তমী এবং বর্তমানে মহাঅষ্টমীর পূজা চলছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হৃদয়ে আনন্দ ও শ্রদ্ধা মিশিয়ে।
প্রতিমাগুলোর চোখেমুখে যেন প্রতিফলিত হচ্ছে বিশ্বাসের দীপ্তি, আর মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার। প্রতিটি পূজামণ্ডপে দেখা যাচ্ছে বর্ণিল আলোকসজ্জা, নিখুঁত কারুকাজে নির্মিত প্রতিমা, আর রঙিন কাপড়ে সজ্জিত দৃষ্টিনন্দন কাঠামো। সন্ধ্যা নামতেই জনসমাগমে জমজমাট হয়ে ওঠে মণ্ডপ এলাকা, ধূপ, ধুনুচি আর ঢাকের শব্দে গমগম করে চারপাশ। কোথাও চলছে আরতি, কোথাও চলছে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। পূজাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মেলা, খাবারের দোকান আর শিশুদের খেলনা বাজার যেন যোগ করেছে বাড়তি প্রাণ।
উৎসব নির্বিঘ্ন রাখতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা। প্রতিটি পূজামণ্ডপে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবক সদস্যরা। মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ নেওয়া হয়েছে অন্যান্য ব্যবস্থা। উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি আয়োজনে শৃঙ্খলা ও শান্তির ছোঁয়া স্পষ্ট। উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শংকর কুমার বালা বলেন, “এবারের পূজা অত্যন্ত সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পালিত হচ্ছে। প্রশাসনের সার্বিক সহায়তা, স্থানীয় মানুষের আন্তরিকতা ও সকল ধর্মাবলম্বীদের সহযোগিতায় তেরখাদায় আমরা সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করতে পেরেছি।”
পূজার আনন্দে উদ্বেল ভক্ত তপু বিশ্বাস জানান, “মা দুর্গা প্রতিবছরের মতো এবারও আমাদের মাঝে এসেছেন শুভ বার্তা নিয়ে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে মানুষের উপস্থিতি, নিরাপত্তা আর পরিবেশ—সবই অত্যন্ত ভালো। মনে হচ্ছে সত্যিই আশীর্বাদ নিয়ে মায়ের আগমন ঘটেছে।” এবার দেবীর আগমন ঘটেছে গজে চড়ে, যা শুভ ও সমৃদ্ধির প্রতীক। আর গমন হবে দোলনায়, শান্তির বার্তা নিয়ে। এই প্রতীকী বার্তা যেন মানুষের মুখে মুখে, আচরণে ও প্রার্থনায় প্রতিফলিত হচ্ছে। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার গণ্ডি পেরিয়ে দুর্গাপূজা হয়ে উঠেছে সামাজিক সংহতির এক মহান উপলক্ষ। আগামী ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় এই মহোৎসব। তবে বিদায়ের সুরের মধ্যেও থেকে যাবে এই উৎসবের সৌন্দর্য, সম্প্রীতির বার্তা আর মানুষের অন্তরস্পর্শী ভালোবাসা।