রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
ঈদ কিংবা পূজার মতো উৎসব এলেই দেশে সক্রিয় হয়ে ওঠে জাল নোট চক্র। পূর্বের ধারাবাহিকতায় এবার হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজাকে ঘিরে জাল নোট কারবারিরা নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। শুধু ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট নয়—কৌশল পরিবর্তন করে ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নোটও জাল করা হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন রিকশা, ইজিবাইক ও মাহিন্দ্র চালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ।
গত এক সপ্তাহে খুলনার খানজাহান আলী ও খালিশপুর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে কেএমপি ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মোট ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৪০০ টাকার জাল নোটসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
২৮ সেপ্টেম্বর রাতে খানজাহান আলী থানা পুলিশ পথের বাজার চেকপোস্ট থেকে বটিয়াঘাটার কল্যানশী গ্রামের মৃত মান্নান গোলজারের ছেলে শহিদ গোলজার (৫২)-কে ২৮ হাজার টাকার জাল টাকাসহ গ্রেপ্তার করে। এর আগে ২৪ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ খালিশপুর থানাধীন বঙ্গবাসী এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোতালেব হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ ওরফে নয়ন (২৭)-কে ৫ লাখ ৭ হাজার ৪০০ টাকার জাল নোটসহ আটক করে।
দুইটি ঘটনার ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।
খুলনার লবণচরা এলাকার ইজিবাইক চালক রহিম মুন্সী বলেন, সারা বছরই জাল নোটের ঝুঁকিতে আছি। বিশেষ করে উৎসবের সময় বেশি হয়। আগে শুধু ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট জাল হতো, এখন ২০, ৫০ বা ১০০ টাকার নোটও জাল হচ্ছে। আমরা যাত্রীদের কাছ থেকে বড় অংকের নোট নিতে ভয় পাই।
রূপসা এলাকার চাল ব্যবসায়ী খয়রুল ইসলাম খোকন বলেন, কিছু মানুষ আছে যারা বেশি লাভের আশায় সৎ পথ ছেড়ে অসৎ পথে পা বাড়ায়। জাল নোটের কারবার ঠিক তেমন একটি অপরাধ। বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়, এই চক্রের প্রধান লক্ষ্য এখন ছোট ব্যবসায়ী ও নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। তিনি বলেন, এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
কেএমপি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. রাশিদুল ইসলাম খান জানান, প্রতি বছর ঈদ, পূজা কিংবা কুরবানির হাট ঘিরে জাল নোট চক্রগুলো সক্রিয় হয়। এবারের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে খুলনা অঞ্চলে জাল নোটের প্রবাহ বেড়েছে। কেএমপি পুলিশের বিশেষ টিম নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে এবং ইতোমধ্যেই জাল নোটসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে শুধু ৫০০ বা ১০০০ নয়, বরং ৫০ এবং ১০০ টাকার নোটও জাল করা হচ্ছে। বিত্তবানরা কার্ডে লেনদেন করায় এই চক্র নিম্ন আয়ের মানুষদের টার্গেট করছে।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, জাল নোট তৈরির সিন্ডিকেটটি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। প্রথম ধাপে অর্ডার অনুযায়ী জাল নোট তৈরি করা হয়। এরপর সেই নোট নির্দিষ্ট অর্ডারদাতার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তৃতীয় ধাপে বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয় এই জাল মুদ্রা।
প্রতি ১০০ পিস ১০০০ টাকার নোট তৈরিতে তাদের খরচ পড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। সেই নোট পাইকারি বিক্রেতার কাছে বিক্রি হয় ৯ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। পরে ওই নোট ধাপে ধাপে খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বাজারে পৌঁছে দেওয়া হয়। মাঠপর্যায়ে এ চক্রের সদস্যরা সাধারণত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার ছলে এই জাল নোট বাজারে ছড়িয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জাল নোটের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয় ব্যস্ত হাট-বাজার, বিপণিবিতান এবং জনসমাগমপূর্ণ এলাকায়। এছাড়া চোরাই পণ্য, স্বর্ণ ও মাদক ব্যবসায়ও জাল নোটের ব্যবহার হয়ে থাকে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও অভিযানের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ানো গেলে জাল নোট চক্রের দৌরাত্ম্য কিছুটা হলেও রোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.