রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
খুলনার শস্যভাণ্ডার খ্যাত ডুমুরিয়া উপজেলায় এবারও শীতকালীন শাকসবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার ও কৃষি বিভাগের নিবিড় তদারকিতে উপজেলাজুড়ে সবুজের সমারোহ ছড়িয়ে পড়েছে। মাঠজুড়ে এখন সারি সারি ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, টমেটো, বেগুন, ওলকপি, লালশাক ও পালংশাকের চাষে ব্যস্ত কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এবার ডুমুরিয়ায় প্রায় ২৫০ কোটি টাকার শীতকালীন শাকসবজি উৎপাদন হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি এখন রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে—ইতালি, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ায়।
কৃষকরা জানান, ভালো ফলনের সঙ্গে বাজারদরও অনুকূলে থাকায় তারা এবার বেশ লাভবান হয়েছেন। সকালে সূর্য ওঠার আগেই মাঠে ছুটছেন কৃষকরা। কেউ কোদাল হাতে জমিতে নিড়ানি দিচ্ছেন, কেউ পানি দিচ্ছেন চারার গোড়ায়, কেউবা পোকামাকড় দমনে ব্যস্ত। তাদের পরিশ্রমে ডুমুরিয়ার মাঠ এখন সবুজে ভরে উঠেছে।
খর্নিয়া ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকপ্রাপ্ত দেশসেরা সবজি চাষি আবু হানিফ মোড়ল বলেন, “এবার শীতকালীন সবজির ফলন খুব ভালো হয়েছে। বিশেষ করে ফুলকপি, ওলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, শিম ও বেগুনের ফলন ভালো হয়েছে। দামও বেশ ভালো পেয়েছি। কৃষকদের মুখে এখন হাসি।”
শোভনার মলমলিয়া গ্রামের কৃষক কামাল বাওয়ালী জানান, “৬ বিঘা জমিতে আমি সিম, টমেটো ও ওলকপি চাষ করেছি। ফলন যেমন ভালো হয়েছে, দামও পেয়েছি আশানুরূপ। ডুমুরিয়ার সবজি এখন বিদেশেও যাচ্ছে—এটা আমাদের জন্য বড় গর্বের।”
৪ নম্বর খর্নিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর বামুন্দিয়া ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল হালিম বলেন, “ডুমুরিয়ার কৃষকদের পাশে আছে কৃষি বিভাগ। তারা সার, বীজ, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছে নিয়মিত। ফলে কৃষকরা এখন আরও সচেতন ও প্রযুক্তিনির্ভর। ফসলের ফলন বেড়েছে, বিষমুক্ত সবজি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে—এটাই সবচেয়ে বড় আনন্দ।”
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ইনসান ইবনে আমিন জানান, “এ উপজেলায় এ বছর ৩ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাকসবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শিম ৩৮০ হেক্টর, টমেটো ২২০ হেক্টর, বেগুন ৩৬০ হেক্টর এবং ফুলকপি ২৬০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। শীতের সবজিতে ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকেরা এখন লাভবান। তারা বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।”
কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, “ডুমুরিয়ার উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরাসরি ঢাকার কাওরানবাজারে যায়। পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে বিষমুক্ত সবজি। কৃষকরা এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন, এটি আমাদের জন্য গর্বের।”
ডুমুরিয়ার কৃষকরা বলছেন, আগে যেখানে তাদের চাষাবাদ ছিল শুধুমাত্র সংসার চালানোর উপায়, এখন তা হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। মাঠে মাঠে ভরে উঠেছে সবুজের হাসি, আর সেই হাসি ছড়িয়ে পড়েছে কৃষকের মুখে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.