রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. কাজী মো. আইনুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) তাঁর স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, পরিচালকের লিখিত অনুমতি ছাড়া কোনো সাংবাদিক হাসপাতালের ইনডোর বা আউটডোরে প্রবেশ করে ছবি তুলতে বা কারও সাক্ষাৎকার নিতে পারবেন না।
অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু গণমাধ্যমকর্মী হাসপাতালের ভেতরে অনুমতি ছাড়া ছবি তুলছেন এবং রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছেন, যা কাম্য নয়। এতে রোগী ও চিকিৎসক উভয়েই বিব্রত হচ্ছেন, পাশাপাশি স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি করা হয়। ৫০০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন এই হাসপাতালে; এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের চলাচলে হাসপাতালের দৈনন্দিন কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে বলেও নথিতে উল্লেখ করা হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এর আগেও নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। সম্প্রতি “বকশিশ না পেয়ে রোগীর অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেওয়ায় রোগীর মৃত্যু”— এমন একটি খবর দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। সেই ঘটনার পরপরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই নির্দেশনা জারি হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
একুশে টেলিভিশনের খুলনা প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলাম নূর বলেন, “সাংবাদিকরা জনগণের জানার অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করেন। কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে সংবাদ সংগ্রহের আগে অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা মানে হচ্ছে তথ্যপ্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করা। এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং জবাবদিহিতার জন্য বড় ধরনের হুমকি।”
একই মত প্রকাশ করেছেন সমকাল পত্রিকার খুলনার স্টাফ রিপোর্টার আবুল হাসান হিমালয়। তিনি বলেন, “খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এমনিতেই অনিয়মে জর্জরিত। গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার সীমিত করলে এসব অনিয়ম আরও আড়ালে থাকবে। জনগণের টাকায় পরিচালিত একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশাধিকার থাকা উচিত।”
অন্যদিকে হাসপাতালের পরিচালক ডা. কাজী মো. আইনুল ইসলাম এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সাংবাদিকদের প্রতি আমাদের কোনো বিদ্বেষ নেই। তবে অনিয়ন্ত্রিত প্রবেশ ও বারবার ছবি তোলার কারণে রোগীদের গোপনীয়তা এবং চিকিৎসাসেবার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছিল। তাই ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য মেডিকেলের মতো এখানেও একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক ও প্রশাসনের সবার সঙ্গে আলোচনা করেই এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।”
হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,সাংবাদিকরা অনেক সময় অনুমতি ছাড়া ওয়ার্ডে প্রবেশ করেন এবং রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন, এতে কখনও কখনও জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে তারা এটিও স্বীকার করেন যে, গণমাধ্যমের কারণে অনেক সময় হাসপাতালের অনিয়ম প্রকাশ্যে আসে, যা সংস্কারে সহায়ক হয়।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, সরকারি স্বাস্থ্যখাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিহার্য। খুলনা মেডিকেলের এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র গণমাধ্যম নয়, সাধারণ মানুষের তথ্য জানার অধিকারকেও সীমিত করে দিচ্ছে।
খুলনার সাংবাদিক সমাজ এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। তাদের মতে,গণতান্ত্রিক সমাজে প্রশাসনিক স্বাচ্ছন্দ্যের চেয়ে জনগণের জানার অধিকারই হওয়া উচিত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।