রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
খুলনার দিঘলিয়ায় নিখোঁজের তিন দিন পর উদ্ধার হলো সাত বছরের শিশু জিসানের বস্তাবন্দি লাশ। শনিবার উপজেলার দেয়াড়া খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকা থেকে পুলিশ মাটি খুঁড়ে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ফয়সাল শেখ (২৬) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জিসান দিঘলিয়ার মণ্ডল জুট টেক্সটাইল মিলে কর্মরত মো. আলমগীর হোসেনের একমাত্র ছেলে। গত ৯ অক্টোবর বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিল সে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কোনো সন্ধান না মেলায় আলমগীর হোসেন দিঘলিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ স্থানীয় বেশ কয়েকটি স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে। সেখানে দেখা যায়, নিখোঁজের দিন বিকেলে জিসানকে গ্রামেরই জি. এম. হান্নান শেখের ছেলে ফয়সালের সঙ্গে হাঁটতে দেখা গেছে। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ।
দিঘলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাবুল আক্তার জানান, সিসিটিভির সূত্র ধরে খুলনা নগরীর খালিশপুর এলাকা থেকে ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সাল ভয়াবহ এক স্বীকারোক্তি দেয়।
তিনি বলেন, “গ্রেপ্তারের পর ফয়সাল জানায়, সে জিসানকে হাত-পা বেঁধে কুপিয়ে হত্যা করে, তারপর লাশ বস্তায় ভরে নিজের বাড়ির উঠানে পুঁতে রাখে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।”
ওসি আরও বলেন, “হত্যার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি। আমরা বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে তদন্ত করছি।”
শিশুহত্যার এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেয়াড়া গ্রামে নেমে আসে শোক ও ক্ষোভের ছায়া। রোববার (১২ অক্টোবর) সকালে স্থানীয়রা খেয়াঘাট এলাকায় মানববন্ধন করে জিসানের হত্যার প্রতিবাদ জানায়। পরে উত্তেজিত জনতা ফয়সালের বাড়িঘর ভাঙচুর করে।
পতিবেশী আব্দুর রহিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “জিসান প্রতিদিন বিকেলে মাঠে খেলতে যেত। যে ছেলেটা গত সপ্তাহেও হাসিমুখে দৌড়াত, আজ সে মাটির নিচে!”
ছেলের লাশের পাশে বসে নির্বাক জিসানের বাবা আলমগীর হোসেন শুধু বললেন, “আমার ছেলেটা কার কী ক্ষতি করেছিল? কেন ওকে এমনভাবে নিতে হলো?”
পুলিশ জানিয়েছে, হত্যার পেছনের কারণ উদঘাটনে একাধিক দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগত শত্রুতা, মানসিক বিকারগ্রস্ততা কিংবা অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, সেটি তদন্ত করা হচ্ছে।
দিঘলিয়ার মানুষ এখন একটাই দাবি তুলেছেন—শিশু জিসানের হত্যাকারীর দ্রুত বিচার।