নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর
গাজীপুর মহানগরীর শিমুলতলী এলাকায় অনুমতি ছাড়াই চলছে অবৈধ মেলা। “ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা”র আড়ালে প্রতিরাতে বসছে জুয়ার আসর ও লটারির নামে প্রতারণার মহোৎসব। প্রশাসন, পুলিশ ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড—কেউই অনুমতি না দিলেও মেলা চলছে দিব্যি, যা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে এলাকাবাসী।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জুমার নামাজ শেষে স্থানীয় মুসুল্লি ও এলাকাবাসী মেলা বন্ধের দাবিতে ঢাকা-গাজীপুর-শিমুলতলী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে যান চলাচল বন্ধ থাকে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রশাসনকে তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়ে হুঁশিয়ারি জানায়—এই সময়ের মধ্যে মেলা বন্ধ না হলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেয় তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএমটিএফ লিমিটেড আর্মি ফার্মা ফ্যাক্টরির নির্ধারিত স্থানে “বেনারশী ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট”-এর মালিক বাদল মিয়া গত ২৭ আগস্ট থেকে অবৈধভাবে মেলাটি পরিচালনা করছেন। জেলা প্রশাসন কিংবা মহানগর পুলিশের কোনো অনুমতি ছাড়াই এই মেলার আয়োজন করা হয়। প্রতিদিন লটারির নামে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় দুই শতাধিক বিক্রয়কর্মী রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে লটারির টিকিট বিক্রি করছে। প্রতিদিন প্রায় ৯ থেকে ১০ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয় বলে জানা গেছে। মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, ল্যাপটপ ও স্বর্ণালংকারের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলা হচ্ছে। তবে ড্রতে পুরস্কার পান কেবল আয়োজকদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাই—অভিযোগ এমনই। এতে প্রতারিত হয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ ক্রেতারা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মেলাটিতে জুয়ার পাশাপাশি চলছে অশ্লীল নাচগান, যা সমাজে অশান্তি ও তরুণদের নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টি করছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর মেলার নাগরদোলায় দুর্ঘটনায় অন্তত পাঁচজন আহত হন বলেও জানা গেছে।
ডুয়েট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও মেলা বন্ধের দাবি জানিয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন। যানজট, শব্দ দূষণ ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্টের বিষয়টি উল্লেখ করে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালমা খাতুন বলেন, “এই মেলার জন্য কোনো আবেদন বা অনুমতি জেলা প্রশাসনের কাছে আসেনি। তারা শুধু একটি চিঠি দিয়েছে, কিন্তু অনুমতি আমরা দিইনি।”
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান বলেন, “মেলার অনুমতির জন্য কেউ আবেদন করেনি। পুলিশও কোনো অনুমতি দেয়নি।”
অন্যদিকে, আয়োজক মাহমুদ দাবি করেন, সেনাবাহিনী অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজর গিফারী বলেন, “আমাদের কেবল জানানো হয়েছিল, অনুমতি দেওয়া হয়নি।”
এলাকাবাসীর প্রশ্ন—যেখানে প্রশাসন, পুলিশ ও ক্যান্টনমেন্ট কেউ অনুমতি দেয়নি, সেখানে এতবড় অবৈধ মেলা কীভাবে চলছে?
তিন দিনের আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর প্রশাসনের পদক্ষেপ কী হয়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে আছে পুরো শিমুলতলী এলাকার মানুষ।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.