জয়পুরহাট প্রতিনিধি
জয়পুরহাটের আরিফ শাহরিয়ার হক মাহি—দারিদ্র্য যাকে দমাতে পারেনি, হার মানাতে পারেনি জীবনের প্রতিকূলতা। চলতি বছর জয়পুরহাট সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়েছেন তিনি। তবে উজ্জ্বল এই ফলাফলের পরও উচ্চশিক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার ছায়া পড়েছে তার জীবনে।
মাহির বাড়ি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার মাতাপুর গ্রামে। বাবা আজিজুল হক অবসরপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টার। মা রেবেকা সুলতানা মারা যান ২০২১ সালে—চিকিৎসার অভাবে। গ্রামের বাড়িতে জমি বা স্থায়ী বাসস্থান নেই। বড় ভাই রিয়ানুল হক একটি ওষুধ কোম্পানিতে সামান্য বেতনে চাকরি করেন। জয়পুরহাট শহরের দেওয়ানপাড়ার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। সেখানেই বাবা ও ছোট ভাই মাহিকে নিয়ে গড়া তাদের ছোট্ট পরিবার।
মাহির সংগ্রামের শুরুটা ছোটবেলা থেকেই। ২০১৭ সালে প্রাথমিক শিক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন দিনাজপুরের বিরামপুর সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। ২০২৩ সালে এসএসসিতেও জয়পুরহাট সদর থানা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৫ অর্জন করেন। অভাবের কারণে এইচএসসিতে প্রাইভেট টিচার বা কোচিং—কোনোটাই ছিল না তার। নিজ প্রচেষ্টাতেই এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।
মাহির বড় ভাই রিয়ানুল বলেন,“যে বেতন পাই, তা দিয়ে আমার সংসারই চলে না। তবুও ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার পেছনে যতটুকু পারি করেছি। তবে কারও সহযোগিতা পেলে ওর লেখাপড়াটা এগিয়ে নিতে সুবিধা হতো।”
অবসরপ্রাপ্ত বাবা আজিজুল হক আক্ষেপ করে বলেন,
“মাহি ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো। এইচএসসিতে ভালো ফল করেছে। কিন্তু এখন আমি নিঃস্ব। ওর মা বেঁচে থাকলে খুশি হতেন। আমি জানি না, টাকার অভাবে ছেলেটার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে কিনা। সে চিন্তায় ও নিজেও ভেঙে পড়েছে।”
তবু হাল ছাড়েননি মাহি। জানালেন,“প্রচণ্ড কষ্ট করে এইচএসসি পেরিয়েছি। খিদে পেটে কলেজ করেছি, কিন্তু কখনো পিছিয়ে যাইনি। আমার স্বপ্ন, আমি মানুষ হতে চাই—নিজেকে গড়তে চাই শিক্ষার আলোয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মতো সামর্থ্য নেই আমাদের, তবে সহায়তা পেলে আমি থামতে চাই না।”
জয়পুরহাট সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহন কুমার দাস বলেন,“মাহি নিঃসন্দেহে মেধাবী। কোনো কোচিং বা প্রাইভেট ছাড়াই সে এইচএসসিতে ভালো ফল করেছে। আমরা তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী।”
এই সমাজের সহানুভূতিশীল মানুষ বা সংগঠন যদি এগিয়ে আসে, তাহলে হয়তো মাহির মতো অদম্য এক তরুণের স্বপ্ন থেমে থাকবে না। হয়তো সমাজ একদিন গর্ব করে বলতে পারবে—দারিদ্র্য জয় করা মাহিই একদিন অনেকের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।