টুঙ্গিপাড়া(গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত গ্রাম্য মারামারি সংস্কৃতি বন্ধে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেশীয় অস্ত্র ঢাল-সড়কি জমা দেওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে টুঙ্গিপাড়া থানার উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে নিজেদের কাছে থাকা সব ধরনের দেশীয় অস্ত্র যেমন ঢাল, সড়কি, বল্লম, দা, রামদা ও লাঠি ইউনিয়ন পরিষদে জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই নির্দেশ অমান্য করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে যারা স্বেচ্ছায় অস্ত্র জমা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
টুঙ্গিপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমি থানায় যোগদানের পর দেখেছি, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামে গ্রামে মারামারি হয়। শ্রীড়ামকান্দি, গিমাডাঙ্গা, পাটগাতি ও গওহরডাঙ্গা এলাকায় ৯ বছরের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত ঢাল-সড়কি, লাঠিসোটা নিয়ে ঝগড়ায় নেমে পড়ে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। একটি ছোট ভুল বা তর্কের কারণে মানুষ আহত হয়, কখনও মৃত্যুও ঘটে। অথচ দেশে আইন আছে, আদালত আছে, সমাজ আছে—তারপরও নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া একপ্রকার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা চাই সবাই এই দীর্ঘদিনের গ্রাম্য মারামারি কালচার থেকে বেরিয়ে আসুক। আইনশৃঙ্খলা মিটিং ও মতবিনিময় সভায় মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি—মারামারি করে কোনো লাভ নেই, বরং এতে পরিবারের মানুষ অকালে প্রাণ হারায়।”
ওসি আরও জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ চলছে। “হাতে অস্ত্র থাকলে মানুষ উত্তেজিত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কিন্তু অস্ত্র না থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই নিজেকে সংযত রাখে। তাই প্রত্যেকে দ্রুত ইউনিয়ন পরিষদে নিজেদের অস্ত্র জমা দিন। জমাকৃত অস্ত্র পরে বিধি মোতাবেক ধ্বংস করা হবে।”
পাটগাতি গ্রামের হান্নান শেখ বলেন, “আগে সামান্য বিষয়ে প্রতিবেশীদের মধ্যে ঢাল-সড়কি নিয়ে মারামারি হতো। এখন পুলিশ এসব অস্ত্র জমা নিচ্ছে—এটা খুবই ভালো উদ্যোগ।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী জানান, “আগে ছোটখাটো তর্কেও ঢাল-সড়কি বেরিয়ে যেত। এখন পুলিশ বলেছে এগুলো জমা দিতে—এতে নিশ্চয়ই সহিংসতা কমবে।”
পাটগাতি ইউনিয়নের গওহরডাঙ্গা ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার রুঙ্গু খান বলেন, “থানার সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রচারণা চালাচ্ছি। যারা অস্ত্র জমা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না; বরং শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে সবাইকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।”
উল্লেখ্য, গত ১৫ সেপ্টেম্বর ও ৬ অক্টোবর টুঙ্গিপাড়ার শ্রীড়ামকান্দি, পাটগাতি ও গওহরডাঙ্গা এলাকায় ডাব কেনা ও ডাব পাড়াকে কেন্দ্র করে দুই দফা সংঘর্ষে ৩৫ জন আহত হন। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতেই পুলিশ এই বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারজানা আক্তার বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশকে সব ধরনের সহযোগিতা করবো। এতে দীর্ঘদিনের গ্রাম্য মারামারি সংস্কৃতি বন্ধ হবে বলে আশা করছি।”