দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে মা ইলিশ রক্ষায় প্রশাসনের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা। তিনি জানিয়েছেন, রাতে অভিযান চালাতে গেলে স্থানীয় জেলেরা হুমকি দেওয়ায় অভিযান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আবার জনবলও কম রয়েছে।
সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, চলতি গত ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন দেশের সব নদ-নদীতে মা ইলিশ ধরা, বিক্রি ও পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে রাতের অন্ধকারে জেলেরা ইলিশ শিকার চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘেœ বলে এমন অভিযোগ উঠেছে।
দৌলতপুর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী মরিচা, ফিলিপনগর, রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের ১ হাজার ২৩৬ জন জেলেকে সরকারের পক্ষ থেকে ২৫ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে দুই জেলেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং উপজেলা প্রশাসন ও বিজিবি’র সহযোগিতায় প্রায় ১৪ কোটি টাকার অবৈধ জাল উদ্ধার করে তা পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।
তবে এসব উদ্যোগের পরও নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়নি।
পদ্মার তীরবর্তী হাট-বাজারগুলোতে প্রতিদিনই মা ইলিশ ও জাটকা বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকায়, আর ছোট আকারের জাটকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০০-৯০০ টাকায়।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার হোসেনাবাদ বাজারে ফিলিপনগর এলাকার আলাউদ্দিন নামের এক মাছ ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে ইলিশ বিক্রি করতে দেখা যায়। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও মাছ বিক্রির কারণ জানতে চাইলে তিনি দ্রæত ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফিলিপনগর এলাকার এক জেলে বলেন, নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আমরা রাতে মাছ ধরি আর সকালে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করি। রাতে প্রশাসনের লোকজন নদীতে ভয়ে নামতে পারে না। এখানে বেশিরভাগ জেলে সশস্ত্র থাকে। আমরা জানি নিষেধাজ্ঞা আছে, কিন্তু কেউ মানি না। আর একজনের দেখে অন্য জেলেরাও মাছ ধরে।
বাজারে মাছের সরবরাহ কেমন জানতে চাইলে হোসেনাবাদ বাজারের স্থানীয় বাসিন্দা ইফতেখার হোসেন সঞ্চয় বলেন, নিষেধাজ্ঞা চলছে তা বোঝার কোনো উপায় নেই। প্রতিদিন সকালে নদীপাড়ের ব্যবসায়ীরা ১৫ থেকে ২০ কেজি বা তারও বেশী ইলিশ মাছ নিয়ে বাজারে আসে। মূলত আমরা ক্রেতারা সচেতন নই, আমরা যদি না কিনি, তারা বিক্রির জায়গা না পেলে ইলিশ ধরবে না। আমার মনে হয় ক্রেতা পর্যায়ে সচেতনার অভাবই বড় কারণ।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হোসেন আহমদ স্বপন বলেন, একদিকে আমাদের জনবল সংকট, অন্যদিকে আইন না মানার প্রবণতা। তারপরও আমাদের অভিযান চলছে। এমনকি জেলেদের পক্ষ থেকে আমাদের অভিযান বন্ধের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। আমরা স্বীকার করছি, মা ইলিশ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছি।
উল্লেখ্য, মা ইলিশ রক্ষায় সরকার ঘোষিত ২২ দিনের এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী শনিবার (২৫ অক্টোবর)।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.