জয়পুরহাট প্রতিনিধি
জয়পুরহাট জেলার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে শহর ও গ্রামের মধ্যে মারাত্মক বৈষম্য। শহরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর উপচে পড়া ভিড়ে শ্রেণিকক্ষে গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অন্যদিকে, গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে—কোথাও শিক্ষকরা অলস সময় কাটাচ্ছেন, কোথাও আবার দিনের পর দিন পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জয়পুরহাটে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৭১টি। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক কর্মরত আছেন ২৪৪ জন, সহকারী শিক্ষক ১ হাজার ৮৮০ জন। তবে এখনো প্রধান শিক্ষক পদে ১২৭টি ও সহকারী শিক্ষক পদে ১৯৬টি শূন্য রয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, শহরের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ঠাঁই নেই শ্রেণিকক্ষে। জয়পুরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১ হাজার ৫৫১ জন, শ্রেণিকক্ষ মাত্র ১৬টি। পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ৩৫১ জন—এক একটি বেঞ্চে চার-পাঁচজন করে বসছে। এতে পাঠদানে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাহফুজুর রহমান।
কালাই মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থাও একই রকম। ৩৪৩ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক মাত্র ৯ জন। বিদ্যালয়ের মাঠ সংস্কার না থাকায় বৃষ্টির পানি জমে থাকে, ফলে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনও সম্ভব হয় না।
অন্যদিকে, গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে বিপরীত চিত্র। কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ৭৮ জন। শ্রেণিকক্ষে ফাঁকা বেঞ্চ, ভবনের চারপাশে নেই সীমানা প্রাচীর। স্থানীয়রা স্কুল মাঠে ফসল মজুত করছেন। কালাই উপজেলার কাথাইল গোপীনাথপুর সরকারি বিদ্যালয়ে ১২৯ জন শিক্ষার্থী থাকলেও উপস্থিত হয় ৫০–৬০ জন। বড়তারা সরকারি বিদ্যালয়ে দেখা গেছে শ্রেণিকক্ষে মাত্র চারজন শিক্ষার্থী।
বাসুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক চারজন, শিক্ষার্থী মাত্র ৫৬ জন। করিমপুর সরকারি বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, জানালা ভাঙা, ছাদে ফাটল। প্রধান শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, “বারবার আবেদন করেও সংস্কারের কোনো সাড়া পাইনি।”
অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষা অফিসের প্রশাসনিক কাজে নিয়মিত শিক্ষকরা ব্যস্ত থাকায় শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। তাছাড়া, ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা কার্যকর না হওয়ায় মাল্টিমিডিয়া বা স্মার্ট ক্লাসরুমের ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, “যেসব বিদ্যালয়ে মানসম্পন্ন পাঠদান হচ্ছে, অভিভাবকেরা সন্তানদের সেখানে ভর্তি করছেন। অন্যদিকে যেখানে গাফিলতি, সেসব বিদ্যালয় দিনে দিনে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।” তিনি সতর্ক করে বলেন, “কার্যকর নজরদারি ও জবাবদিহিতা না থাকলে এই বৈষম্য আরও গভীর হবে—তখন শিক্ষার মানোন্নয়নের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে পড়বে।”
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.