রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক শেষে খুলনা বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে এক ধরনের উচ্ছ্বাস। কেন্দ্রীয় নেতাদের ফোন, গুলশানের বৈঠকের আমন্ত্রণ এবং সেখানে অংশ নেওয়াকেই তারা দেখছেন প্রাথমিক সাফল্যের প্রতীক হিসেবে। তবে বৈঠকে দেওয়া ঐক্যের নির্দেশনার বাস্তবায়নে এখনো মাঠপর্যায়ে তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
দলীয় সূত্র জানায়, ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে সোমবার সন্ধ্যায় চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে খুলনা বিভাগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকের তিন দিন আগ থেকেই ফোনে নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। কারা সেই আমন্ত্রণ পেলেন— তা নিয়েই দলীয় অঙ্গনে ছিল তীব্র কৌতূহল।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বর্তমান কমিটির পদধারী নেতাদের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকা অনেক পুরনো মুখও। এমনকি যাদের নির্বাচনী মাঠে তৎপরতা খুব একটা দৃশ্যমান নয়, তারাও ছিলেন তারেক রহমানের সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে।
নেতাকর্মীদের ধারণা ছিল, বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বক্তব্য শুনবেন এবং কয়েকজনকে দেওয়া হবে মনোনয়নের ইঙ্গিত। কিন্তু বৈঠক শেষে সে ধরনের কোনো ঘোষণা আসেনি। এতে কেউ কেউ হতাশ হলেও বেশিরভাগ নেতা খুশি কেন্দ্রের দৃষ্টিতে আসতে পেরে।
জানা গেছে, গত বছর জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর রাজনীতিতে চাপের মুখে পড়েন সাবেক আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান। তার অনুসারীরা অভিযোগ করেন, নতুন কমিটিতে তাদের কেউ স্থান পাননি। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের ফোন পেয়ে তারা এটিকে রাজনৈতিক পুনর্বাসন হিসেবে দেখছেন।
আমীর এজাজ খান বলেন, দাকোপ-বটিয়াঘাটা আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। আমি তিনবার নির্বাচনে হেরেছি, কিন্তু মাঠ ছাড়িনি। দলের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা ও উপস্থিতির মূল্যায়ন হবে বলেই আশা করছি।
অন্যদিকে স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন মুখ জিয়াউর রহমান পাপুল বলেন, স্থানীয় নেতাকর্মীদের অনুরোধে প্রথমবারের মতো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কেন্দ্রের ফোন পেয়েছি, বিশ্বাস করি তারা আমার ওপর আস্থা রাখবেন।
খুলনা-২ আসন থেকে ফোন পেয়েছেন সাবেক এমপি ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বর্তমান সভাপতি শফিকুল আলম মনা এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন। প্রায় চার বছর রাজনীতিতে প্রান্তিক অবস্থায় থাকা মঞ্জুর অনুসারীরা এই ফোন কলকে পুনরুজ্জীবনের বার্তা হিসেবে দেখছেন।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, প্রার্থীদের তৎপরতা ও গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে চেয়ারম্যান ভালোভাবেই অবগত। তাই আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমি আশাবাদী, সিদ্ধান্ত নিতে তিনি ভুল করবেন না।
খুলনা-৪ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী পারভেজ মল্লিক জানান, এলাকার মানুষের জন্য দীর্ঘদিন কাজ করেছি। কেন্দ্রের এই ডাকা আমার কাজের মূল্যায়ন বলেই মনে করছি।
তবে বৈঠকে ঐক্যের বার্তা দিলেও খুলনা বিএনপির ভেতরে বিভাজনের রেখা এখনো স্পষ্ট। মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু ঐক্য করবো কাদের সঙ্গে— যারা দুঃসময় মাঠে ছিলেন না, তাদের সঙ্গে? কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই ঐক্য বাস্তবায়ন কঠিন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, খুলনা বিভাগের বৈঠকে তারেক রহমানের বার্তাটি ছিল স্পষ্ট— বিএনপিকে সামনে এগোতে হলে দলকে ঐক্যের বন্ধনে ফিরতে হবে। এখন দেখার বিষয়, মাঠপর্যায়ে সেই বার্তা কতটা বাস্তবে রূপ নেয় এবং কার হাতে ধরা পড়ে বিএনপির ‘চূড়ান্ত ফোন’।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.