রাসেল আহমেদ, খুলনা প্রতিনিধি
খুলনার তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের কোলা পাটগাতি গ্রামের মোল্লাবাড়ির সন্তান মো. গাউস মোল্লা—দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিতর্কে থাকা এই ব্যক্তির মুক্তিযোদ্ধা সনদ অবশেষে বাতিল করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মৃত্যুর এক মাস পর এই বাতিলের খবর এলাকায় নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
গত ২৬ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব হরিদাস ঠাকুর স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে গাউস মোল্লার নাম অন্তর্ভুক্ত থাকা মুক্তিযোদ্ধার গেজেট (গেজেট নম্বর–১৬৯) বাতিলের ঘোষণা আসে। মৃত্যুর আগে গাউস মোল্লা খুলনার মিস্ত্রিপাড়া খালপাড় এলাকায় বসবাস করতেন।
তেরখাদার প্রবীণ বীর মুক্তিযোদ্ধা এস. এম. বদরুল ইসলাম বলেন, “আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি দেশের স্বাধীনতার জন্য, সনদ বা সুযোগের জন্য নয়। কিন্তু আজ দেখতে হচ্ছে, অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়কে ব্যবহার করছেন ব্যক্তিস্বার্থে। আমরা চাই, তেরখাদায় যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন, তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে গেজেট বাতিল করা হোক। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা রক্ষার জন্য এটি এখন অপরিহার্য।”
এদিকে মধুপুর ইউনিয়নেরই সন্তান ও ঢাকা কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পোর্ট সেক্রেটারি এম এ আলম জানান, “আমি এলাকার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে আড়াই বছর ধরে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা গাউস মোল্লার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়েছি। অসংখ্য মানববন্ধন, প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। অবশেষে সেই সংগ্রামের ফল মিলেছে। তবে এখানেই আমাদের লড়াই শেষ নয়—শুধু গাউস মোল্লা নয়, তেরখাদায় যেসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে, তাদের সবার নাম বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
গাউস মোল্লার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হওয়ার খবরটি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক চৌধুরী ফখরুল ইসলাম বুলু বলেন, “এলাকায় আরও অনেকে আছেন যারা মিথ্যা তথ্য, জাল জন্মসনদ বা ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন। তাদের কারো কারো ছেলে-মেয়ে সরকারি চাকরিতেও আছেন। এমন মানুষরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন। আমরা চাই, প্রশাসন কঠোর তদন্ত করে সকল ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিক, যাতে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস কলঙ্কমুক্ত থাকে।”
তবে পরিবারের পক্ষ থেকে এ ঘটনার ভিন্ন ব্যাখ্যা এসেছে। গাউস মোল্লার ছেলে নাসিম মোল্লা বলেন, “আমার বাবা এক মাস আগে মারা গেছেন। এখন তার গেজেট বাতিল হয়েছে—আমরা মনে করি বিষয়টি অন্যায়। আমরা আদালতের শরণাপন্ন হব। আইনগতভাবে লড়াই চালিয়ে যাব।”
২০২২ সাল থেকেই গাউস মোল্লার বিরুদ্ধে প্রকৃত জন্মতারিখ গোপন করে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের পর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন এবং প্রশাসনের কাছে একাধিক লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। পরে তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিললে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গাউস মোল্লার নাম অন্তর্ভুক্ত থাকা গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।
স্থানীয়রা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত তেরখাদায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের এক প্রকার স্বস্তি এনে দিয়েছে। অনেকের ভাষায়, “এই বাতিলের মধ্য দিয়ে এক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার মুখোশ উন্মোচন হলো। এটি শুধু একজনের নাম বাদ যাওয়া নয়—এটি তেরখাদার মানুষ ও সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের ন্যায়বিচারের দাবির বাস্তবায়ন।”
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.