খুলনা প্রতিনিধি
খুলনায় দিঘলিয়া উপজেলার বহুল আলোচিত ফিরোজ গাজী ও আফজাল হোসেন অপহরণ ও গুমের ১৫ বছর পর খুলনা সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী নিখোঁজ ফিরোজ গাজীর ছোট ভাই গাজী ইমরান হাচান মনিরুল, যিনি সেনহাটী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গাজী সিরাজুল ইসলামের পুত্র। মামলায় ১৫ থেকে ১৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সন্তানের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনতে গুনতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন ফিরোজ গাজীর মা মোসাঃ ফজিলা বেগম। পরিবার বলছে, রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই ফিরোজ গাজীকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছিল।
বাদী গাজী ইমরান হাচান মনিরুল জানান, ফিরোজ গাজী তৎকালীন সময়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রাজনৈতিক নির্যাতনের ভয়েই তিনি খুলনা শহরে ছোট বোন ফারহানা সিরাজ মনিরার বাসায় অবস্থান করছিলেন।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১১ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ফিরোজ গাজী ও তার বন্ধু বারাকপুরের লাখোহাটি গ্রামের আফজাল হোসেন মোটরসাইকেল নিয়ে বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরিবার মরিয়া হয়ে খোঁজ করেও ব্যর্থ হয়ে ১২ অক্টোবর খুলনা থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি নং-৬০৬) করেন।
বাদীর অভিযোগ, পরে প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে জানতে পারেন, সেদিন বিকেলে খুলনা শহরের সাতরাস্তা মোড়ের গরীব নেওয়াজ ক্লিনিকের পেছনের পাকা রাস্তায় পৌঁছালে সাদা পোশাকধারী ১৫-১৬ জন লোক র্যাব স্টিকারযুক্ত একটি মাইক্রোবাসে করে এসে ফিরোজ গাজী ও আফজাল হোসেনকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। এসময় ফিরোজ গাজীর কাছ থেকে একটি কালো রঙের পালসার মোটরসাইকেল ও নগদ এক লাখ ৫৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
ফিরোজ গাজীর পরিবার জানায়, ঘটনার পর তারা খুলনা র্যাব-৬ কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল, ফিরোজ ও আফজালকে শিগগিরই ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ মেলেনি। সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভয়ভীতি কাটিয়ে মামলার উদ্যোগ নিতে তাদের দীর্ঘ সময় লেগে যায়।
গাজী ইমরান হাচান মনিরুল বলেন, “আমার মা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ফিরোজের ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। আজ মা নেই, তবুও আমি চাই, সত্য প্রকাশ পাক, বিচার হোক।”
স্থানীয় প্রবীণ রাজনীতিকরা জানান, ফিরোজ গাজী ও আফজাল হোসেন অপহরণ-গুমের ঘটনা এক সময় খুলনার রাজনীতি ও জনমনে গভীর আলোড়ন তুলেছিল। এখন মামলার মধ্য দিয়ে হয়তো হারিয়ে যাওয়া দুই তরুণের ভাগ্য রহস্য উন্মোচিত হওয়ার পথ খুলবে।
খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, “বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার পেছনের সত্য উদঘাটনে আমরা কাজ করছি।”
১৫ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া ফিরোজ গাজী ও আফজাল হোসেনের সন্ধান আজও মেলেনি। পরিবারগুলোর একটাই দাবি— ন্যায়বিচার হোক, যেন আর কোনো মা ফজিলা বেগমের মতো শোকে মৃত্যুবরণ না করেন।

 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
								                                                                                     
                                    
 
                                 
                                 
                                 
                                