দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মার দূর্গম চরে খড়ের মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে দুই সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ বন্দুক যুদ্ধে ৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় জড়িত নয় এমন নিরাপরাধ ও নিরীহ ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে।
ফলে চরবাসীর মাঝে গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়েছে, সেইসাথে বেড়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠাও। গত ২৭ অক্টোবর দুপুরে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের নিচখানপাড়ার মন্ডল বাহিনী ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কাকন বাহিনীর মধ্যে মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজার দূর্গম পদ্মার চরে ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কয়েক ঘন্টা ধরে চলা বন্দুকযুদ্ধে উভয় বাহিনীর ৩জন নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় মুনতাজ মন্ডল(৩২) ও রাকিব মন্ডল (১৮) নামে আরো দু’জন। তারা চিকিৎসাধীন রয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন, মন্ডল বাহিনীর আমান মন্ডল (৩৬), নাজমুল মন্ডল (২৬) এবং কাকন বাহিনীর লিটন আলী ঘোষ (৩০)।
দুই বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধ ও সংঘর্ষের ঘটনায় দু’দিন পর বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে মন্ডল বাহিনীর নিহত আমান মন্ডলে বাবা মিনহাজ মন্ডল বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ কাকন বাহিনী প্রধান কাকনকে প্রধান আসামী করে ২৩ জনের নামে দৌলতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় আরো ২০-৩০জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়। মামলা দায়েরের পর শতাধিক পুলিশ বৃহস্পতিবার দিনভর পদ্মার চরে আসামী ধরতে অভিযান চালায়। তবে পুলিশের অভিযানের খবরে চরাঞ্চলে বসবাসকারীরা ভয়ে ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘর ছেড়ে গা ঢাকা দেয়। ফলে পুলিশ আসামি গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয়।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, পদ্মার চরে বন্দুকযুদ্ধ ও সংঘর্ষের ঘটনায় দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীর নাম জড়ানো হয়েছে। যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত নয় বলে দাবী করেছেন। তাদের দাবী এলাকার পূর্বের বিরোধের জের ধরে তাদেরকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। বিগত সময়ে কাকন বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এমন কিছু নিরীহ মানুষকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এরফলে এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
পদ্মার চরে হত্যা মামলায় মরিচা ইউনিয়নের ভুরকা-হাটখোলাপাড়া এলাকার মৃত আলিম সরদারের ছেলে উজ্জল সরদার (৪৫) ও তার ভাই রফিকুল সরদার (৪৩) কে মামলার দুই ও তিন নম্বর আসামি করা হয়েছে। এরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী। অথচ তাদেরকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উজ্জল সর্দারের ভাই হিসাব সরদার বলেন, উজ্জল সরদার দৌলতপুরে পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার ঠিকাদারী ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। স্থানীয় একটি স্বার্থান্বেষী মহল ওই কাজ বন্ধ বা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পরিকল্পিতভাবে উজ্জল ও রফিকুলকে হত্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। অভিযুক্ত উজ্জল সরদার জানান, আমি একজন ঠিকাদার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় নদীভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করছি।
মরিচা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা কাজটি বন্ধ করতে প্রতিপক্ষকে দিয়ে আমাদের দুই ভাইকে আসামি করিয়েছেন। সংঘর্ষের সময় আমি বাড়িতেই ছিলাম, যার সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে। কাকন বাহিনীর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারাও বিভিন্ন সময় আমাদের ওপর হামলা নির্যাতন চালিয়ে থাকে।
মামলার বাদী নিহত আমান মন্ডলের বাবা মিনহাজ মন্ডল বলেন, নিহতদের মধ্যে একজন তার ছেলে এবং অপরজন ভাগনে। তবে নিরীহ ও নিরাপরাধ লোকজনকে মামলায় জড়ানোর অভিযোগ সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। নিরীহ ও নিরাপরাধ ব্যক্তিদের আসামি করার বিষয়ে মরিচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, ২০০৩-২০০৪ সালের দিকে কাকন বাহিনীর (তৎকালীন পান্না বাহিনী) হাতে উজ্জলের পরিবারও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। তার দুই চাচাতো ভাই নিহত হয়েছে। তবে উজ্জল সরদারের মতো একজন লোক পদ্মার চরে গিয়ে এমন হত্যাকান্ড ঘটাবে এটা বিশ্বাস করা কঠিন।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হবে, কেবল তারাই গ্রেপ্তার হবেন। যারা নির্দোষ, তারা অবশ্যই অব্যাহতি পাবেন।
পদ্মার চরের খড়ের মাঠ দখল নিয়ে বন্দুকযুদ্ধে ও সংঘর্ষে ৩জন নিহত হওয়ার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি এলাকাবাসীর। কোন নিরাপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়টিও দেখার অনুরোধ তাদের।

 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
								                                                                                     
                                    
 
                                 
                                 
                                 
                                