জয়পুরহাট প্রতিনিধি
জয়পুরহাটের চিরি নদী খননের মাত্র তিন বছরের মাথায় আবারও ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীটি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, অপরিকল্পিত খনন, তদারকির অভাব ও নদীপাড়ে মাটি-বালু ফেলে রাখার কারণে নদীটি আবারও মৃতপ্রায় অবস্থায় চলে যাচ্ছে। এতে দুই পাড়ের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন সেচ সুবিধা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং নৌ-যোগাযোগের সুফল থেকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, খননকাজের সময় নদীর পাড়ে রাখা মাটি ও বালু বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে আবারও নদীতে পড়ছে। ফলে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও নদী কচুরিপানায় ভরে গেছে, কোথাও পানি থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে নদীটি দিন দিন নাব্য হারাচ্ছে।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার খনজনপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সোবাহান বলেন, “খননের আগে নদীতে কিছুটা পানি থাকত, এখন সেটুকুও নেই। খনন করার পর থেকে বরং পানি সংকটে পড়েছি। নদী কচুরিপানায় ভরে গেছে।”
একই এলাকার আজাদ হোসেন বলেন, “নদী খননের পর ভেবেছিলাম মাছ ধরার দিন ফিরে আসবে। কিন্তু এখন নদীতে পানি নেই, মাছও নেই। আমাদের কোনো উপকারে আসেনি এই প্রকল্প।”
কুঠিবাড়ী ব্রিজ এলাকার ফারুক হোসেনের প্রশ্ন—“কোটি কোটি টাকা খরচ হলো, কিন্তু নদীতে পানি নেই। তাহলে সাধারণ মানুষ কী সুবিধা পেল?”
জানা গেছে, জয়পুরহাট জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত চারটি নদীর মধ্যে আক্কেলপুর থেকে সদর পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে চিরি নদী। ২০১৯ সালের মার্চে প্রায় ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি নদী খনন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, যা শেষ হয় ২০২২ সালের জুনে। উদ্দেশ্য ছিল কৃষিতে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নৌ যোগাযোগ উন্নয়ন এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করা। কিন্তু চিরি নদীতে সেই উদ্দেশ্যের বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়নি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জয়পুরহাট জেলা সমন্বয়ক লুৎফুল্লাহিল কবির আরমান বলেন, “চিরি নদী অপরিকল্পিতভাবে খনন করা হয়েছে। নদীর পাড়ে রাখা মাটি বর্ষায় ধুয়ে নদীতে পড়ায় এখন নদী আবারও ভরাট হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া শুধু খনন করলেই নদীর নাব্য টেকে না।”
এ বিষয়ে জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াদুল ইসলাম বলেন, “চিরি নদী বড় কোনো নদীর সঙ্গে সংযুক্ত না থাকায় সেখানে পানি কম থাকে। কচুরিপানা জমে যাওয়ার বিষয়ে আমরা অবগত নই। দ্রুত সময়ে নদীটি পরিদর্শন করে বরাদ্দ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শুরু করা হবে।”
নদীর নাব্য টিকিয়ে রাখা ও জনগণের সুবিধা নিশ্চিত করতে চিরি নদী পুনঃখনন ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশ কর্মীরা।

                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    