রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
খুলনার তেরখাদা উপজেলার খাল-বিলজুড়ে চলছে ইলেকট্রিক শক মেশিনে অবাধে মাছ শিকার। এতে ধ্বংস হচ্ছে মৎস্যসম্পদ, বিপন্ন হচ্ছে জলজ জীববৈচিত্র্য, আর হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক দেশীয় প্রজাতির মাছ।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, ইনভার্টারের সাহায্যে তৈরি ইলেকট্রিক শক মেশিন পানিতে ছেড়ে দিয়ে অসাধু মৎস্য শিকারীরা মা মাছ, পোনা, এমনকি ক্ষুদ্র জলজ প্রাণিও নির্বিচারে শিকার করছে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বৈদ্যুতিক স্রোতে অসাড় হয়ে পড়ছে মাছ, পরে জাল দিয়ে সহজেই তুলে নিচ্ছে শিকারীরা।
স্থানীয়রা জানান, ভুতিয়ারবিল, বাসুয়াখালী বিল, কোলা বিলসহ বেশ কয়েকটি খাল-বিলে এখন নিয়মিতভাবে চলছে এই অবৈধ কার্যক্রম। শক মেশিনের পাশাপাশি ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ চায়না জাল, ট্রেন জাল ও কারেন্ট জাল। ছোট ফাঁসের এসব জালে ছোট-বড় সব ধরনের মাছই ধরা পড়ছে। এমনকি মাছের ডিম, রেনু পোনা, কাঁকড়া, কুচিয়া, সাপসহ নানা উপকারী জলজ প্রাণিও মারা যাচ্ছে।
মাছ ধরার এই ভয়াবহ পদ্ধতির ফলে দ্রুত কমে যাচ্ছে মাছের সংখ্যা। এক সময় এবং যেখানে বিলের জলে মাছের ছপছপ শব্দ শোনা যেত, এখন সেখানে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা। স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা সদর, কাটেংগা, জয়সেনা ও তেরখাদা বাজারে খোলামেলাভাবে বিক্রি হচ্ছে এই নিষিদ্ধ জাল। নতুন ধরনের চায়না জালে ছোট মাছও সহজে ধরা পড়ায় ব্যবসায়ীরা তা দেদারসে বিক্রি করছে। রাতে এসব জাল পেতে রেখে সকালে তা উঠিয়ে মাছ সংগ্রহ করছে জেলেরা।
প্রকৃতি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, ইলেকট্রিক শক মেশিনে মাছ ধরা কেবল মাছ নয়, পুরো জলজ পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে একদিকে মাছের প্রজনন চক্র নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে জলজ প্রাণিকূল হারাচ্ছে প্রজননের ক্ষমতা। সময়মতো এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
এ বিষয়ে তেরখাদা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান বলেন,“ইলেকট্রিক শক মেশিনে মাছ ধরা সম্পূর্ণ বেআইনি ও পরিবেশবিধ্বংসী কাজ। আমরা বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছি। দ্রুতই অভিযানে নামা হবে। নিষিদ্ধ কারেন্ট, চায়না ও ট্রেন জাল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশীয় মাছ ও প্রাকৃতিক জলজ সম্পদ রক্ষায় প্রশাসন সর্বাত্মক তৎপরতা চালাবে। সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিয়মিত অভিযানই পারে এই ধ্বংসযজ্ঞ থামাতে।”
স্থানীয়দের দাবি, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে তেরখাদার খাল-বিলের জলে আর মাছের ছপছপ শব্দ শোনা যাবে না—থাকবে শুধু শূন্য জলের নিঃস্তব্ধতা।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.