সাইফুল ইসলাম,বাবুগঞ্জ(বরিশাল) প্রতিনিধি
২০০৭ সালের দিকে শখের বসে স্থানীয় পর্যায়ে পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেছিলাম। তখন ভাবিনি, এই লেখালেখিই আমার জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ এবং সংগ্রামী অধ্যায় হয়ে উঠবে। শুরুটা ছিল কেবল ভালোবাসা থেকে, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি পরিণত হয়েছে পেশার চেয়ে বড় এক দায়িত্বে।
এই আঠারো বছরের সাংবাদিকতা জীবনে কখনো কপি–কাট–পেস্ট সাংবাদিকতা করিনি। প্রতিটি সংবাদে চেষ্টা করেছি নিজের মেধা, যোগ্যতা, মনন এবং শ্রম ঢেলে দিতে। হয়তো সবসময় পেশাদারিত্বের নিখুঁত মানদণ্ডে পৌঁছাতে পারিনি, কিন্তু চেষ্টায় কোনো ঘাটতি ছিল না।
বরিশাল জেলা শহর থেকে শুরু করে ঢাকার অনেক সিনিয়র সাংবাদিক ও গুণীজনের কাছ থেকে শিখেছি সংবাদ লেখার কৌশল, শিখেছি সাংবাদিকতার মূল্যবোধ। এইভাবেই একদিনে নয়—বছর পার করে গড়ে উঠেছে আমার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার।
সংগঠন ও নেতৃত্বের পথে
এই সময়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় বেশ কিছু জাতীয় দৈনিক এবং বরিশাল থেকে প্রকাশিত প্রধান স্থানীয় পত্রিকায় বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। পাশাপাশি বাবুগঞ্জ প্রেসক্লাব ও বাবুগঞ্জ উপজেলা রিপোর্টার্স ইউনিয়নের নেতৃত্বেও দায়িত্ব পালন করেছি—ছিলাম সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং উন্নয়নের ধারায় সক্রিয় সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন যুক্ত থেকেছি।
সিনিয়র সহকর্মীদের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধা ও ভক্তি ছিল অবিচল। কখনো অসদাচরণ বা অহংকার করিনি। বরং তাদের কাছ থেকেই শিখেছি সাংবাদিকতার প্রকৃত চেতনা—সত্য, ন্যায় ও মানবতার পক্ষে কলম চালানো।
মানুষ, সমস্যা ও সম্ভাবনার গল্প
এই দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে অসংখ্য মানবিক সংবাদ, সমাজের অসঙ্গতি, দুর্নীতি, অন্যায়, এবং অসহায় মানুষের কান্না তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কখনো শতভাগ নিখুঁত হতে পারিনি—কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল একটাই: সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা।
যেসব পত্রিকায় কাজ করেছি, সেসব প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক, প্রতিনিধি, ও মালিকদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেছি। সংবাদ পরিবেশনে কখনো ব্যক্তিগত পক্ষপাত রাখিনি।
রক্তচক্ষুর ভয় আর বাস্তবতার কষ্ট
দীর্ঘ এই পথে অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মীর ভালো কাজের প্রশংসা করেছি, আবার কারও অন্যায়-দুর্নীতির খবরও প্রকাশ করেছি।
সেই জন্য বহুবার রক্তচক্ষু, হুমকি, অপমান ও হামলার শিকার হয়েছি। তবু পিছিয়ে যাইনি—কারণ সত্য বলা আমার নেশা, আমার দায়বদ্ধতা।
সম্প্রতি বাবুগঞ্জের কেদারপুর ইউনিয়নের এক রাজনৈতিক সমাবেশ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পরও নানা রকম হুমকি পেয়েছি। অথচ সংবাদে নেতার ইতিবাচক দিকও তুলে ধরা হয়েছিল। শুধু একজন সিনিয়র নেতার অশোভন মন্তব্য প্রকাশ করাতেই ক্ষোভের মুখে পড়েছি।
স্থানীয় সাংবাদিকতা কোনো বড় আয়ের পেশা নয়, কিন্তু ঝুঁকি—প্রতিদিনের। প্রশ্ন জাগে—সত্য বলার অপরাধে কেন আজও সাংবাদিকরা রক্তচক্ষুর শিকার?
একটি উপলব্ধির নাম স্থানীয় সাংবাদিকতা
আজ আঠারো বছর পর অনুভব করছি—স্থানীয় সাংবাদিকতার প্রদীপটি যেন ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে।
এই পেশায় শ্রম আছে, ত্যাগ আছে, কিন্তু প্রাপ্য সম্মান ও নিরাপত্তা খুবই সীমিত।
যাদের প্রশংসা করেছি, তাদের অল্প কয়েকজন “ধন্যবাদ” বলেছেন।
আর যাদের ভুল তুলে ধরেছি, তারা দিয়েছেন হুমকি, অপমান, মামলা ও ভয়।
তবুও আমি টিকে আছি—কলমের শক্তিতে, নীতির বিশ্বাসে।
শেষ কথা
আমি জন্মেছি মধ্যবিত্ত পরিবারে। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে অনেকের মতো অন্য পথে না গিয়ে বেছে নিয়েছিলাম স্থানীয় সাংবাদিকতার পথ।
আজও মনে হয়—ইচ্ছে করে ফিরে যাই সেই ২০০৭ সালের দিনে, আবার নতুন করে শুরু করি জীবনটা। কিন্তু তা আর সম্ভব নয়।
তবু মনে একটাই বিশ্বাস—যতদিন বেঁচে আছি, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কলম চালিয়ে যাব।
আর যদি একদিন ক্লান্ত হয়ে থেমেও যাই, তবু চাই—আমার লেখা যেন একজন সৎ সাংবাদিকের নীরব সাক্ষী হয়ে থাকে।
যারা আমার লেখা পড়ছেন, সমালোচনা করছেন, উৎসাহ দিচ্ছেন—আপনাদের প্রতি আমার অশেষ ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা।
আপনাদের ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.