কোটালীপাড়া প্রতিনিধিঃ
বিয়ের বাজার থেকে শুরু করে ডেকোরেশনের কাজ সবই শেষ করেছিল লিমা খানমের পরিবার। চলছিল গায়ে হলুদের আয়োজন। এ সময় প্রতিপক্ষের হামলায় পন্ড হয়ে যায় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। হামলাকারীরা লিমাদের বাড়ি ঘর ভাংচুর করে লুটে নেয় বিয়ের শাড়ী অলংকার।
গত বুধবার গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের বর্ষাপাড়া গ্রামে এ বর্বরোচিত ঘটনা ঘটে।
আজ বৃহস্পতিবার নিজ বাড়িতে বসে লিমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিপক্ষের হামলার কারণে নিজ বাড়িতে বসে বিয়ে অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি লিমার পরিবারের। বাধ্য হয়ে তার পরিবার উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের দিঘলীয়া গ্রামে মামা বাড়িতে বসে লিমার বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে। লিমা খানম (১৮) উপজেলার বর্ষাপাড়া গ্রামের কালাম বিশ্বাসের মেয়ে।
জানাগেছে, এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বর্ষাপাড়া গ্রামের বদিউজ্জামান বিশ্বাসের সাথে মামুনুর রশীদ সিকদারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই সূত্র ধরে গত বুধবার সকালে বদিউজ্জামান বিশ্বাসের লোকজন মামুনুর রশীদ সিকদার গ্রুপের রিপন বিশ্বাস (৩৩) কে মারধর করে। এ ঘটনার পরে মামুন বিশ্বাসের লোকজন একত্রিত হয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বদিউজ্জামান বিশ্বাস গ্রুপের কালাম বিশ্বাস, রব বিশ্বাস, দিদার বিশ্বাস, রসুল বিশ্বাস, ফেরদাউস বিশ্বাস, বাচ্চু বিশ্বাস, শামিম বিশ্বাস ও ফকা বিশ্বাসের বাড়ি ঘর ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।
লিমা খানমের পিতা কালাম বিশ্বাস বলেন, আজ বৃহস্পতিবার আমার বাড়িতে বসে আমার মেয়ে লিমার বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। সে মোতাবেক আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলাম। গতকাল বুধবার ছিল গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের কিছু সময় আগে মামুন শিকদারের লোকজন আমাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ি ঘর ভাংচুর ও অনুষ্ঠান পন্ড করে দেয়। আমরা আমাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমার শ্বশুর বাড়ি বসে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি।
লিমার মা চম্পা বেগম বলেন, মামুন শিকদারের লোকজন আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে আমার মেয়ের বিয়ের শাড়ী অলংকার লুট করে নিয়ে গেছে। এ খবর পেয়ে আমার ভাইয়েরা তাদের বাড়িতে ুআমার মেয়ের বিয়ের সকল আয়োজন করেছে।
লিমার মামা হায়েদার আলী বলেন, আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠান না হলে আমার ভাগ্নি লিমার বিয়ে ভেঙ্গে যেত। তাই সকল দিক চিন্তা করে আমরা বর পক্ষের সাথে আলাপ করে আমাদের বাড়িতে লিমার বিয়ের আয়োজন করেছি।
বদিউজ্জামান বিশ্বাস বলেন, মামুন শিকদারের লোকজন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আমার আত্মীয় স্বজনের ৮টি বসতঘর ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। এ সময় বাঁধা দিতে গেলে তারা নিরহ লোকজনদেরকে মারপিট করে। একটি বিয়ে বাড়িতে হামলা চালিয়ে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান পন্ড করে দেয়। ভয়ে পরিবারটি উপজেলার দিঘলীয়া গ্রামে এক আত্মীয় বাড়িতে বসে কন্যাকে বিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে মামুনুর রশীদ সিকদারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ভাংচুর ও লুটপাটের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার কোন লোকজন বদিউজ্জামান বিশ্বাসের লোকজনকে মারধর করেনি। বরং বদিউজ্জামানের লোকজন রিপন বিশ্বাস নামে এক যুবককে কুপিয়ে আহত করেছে। সে বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। রিপন মারা যেত পারে এ ভয়ে অনেকেই এখন এলাকা ছাড়া। এ কারণে কালাম বিশ্বাস শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে তার মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছে।
কোটালীপাড়া থানার ওসি মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, বর্ষাপাড়া গ্রামের পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোন পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।