শরীফ আল-আমীন, তজুমদ্দিন (ভোলা) প্রতিনিধি
মাটিতেই নিঃশেষ হয় জীবনের শেষ অধ্যায়। আবার এ মাটিতেই কেউ কেউ খুঁজে বেড়ান । জীবনের সফলতা, খুঁজে পান হাসির প্রতিচ্ছবি। গত প্রায় চার যুগেরও বেশি সময় ধরে মাটির তৈরি তৈজসপত্র বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন দ্বীপ জেলা ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলা
গোলকপুর গ্রামের কয়েকটি পরিবার।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মৃৎ শিল্পকে বুকে আঁকড়ে ধরে কয়েকটি পরিবার বহণ করে চলছেন শত বছরের ঐতিহ্যকে। তারা এ শিল্পকে বাচিঁয়ে রেখেছেন সুনিপণ হাতের ছোয়ায় ।
পুরুষদের পাশাপাশি বসে নেই নারীরাও। পুরুষেরা মটারের সাহায্যে সুনিপুন হাতে দধীর পাতিল
তৈরি করে নারীরা উক্ত পাতিলের তলা সংযুক্ত করে।
এসব জিসিপত্র তৈরির প্রধান উপকরণ মাটি।
পতিত জমি থেকে এঁটেল মাটি সংগ্রহ করার পর পা দিয়ে কাঁদা করে একাটি গোলাকৃতির চাকের মধ্যে মটারের সাহয্যে পণ্য বানানো হয়। এরপর রোদে শুকানো হলেই কড়কুটো ও লাকড়ি জ্বালিয়ে ভাটায় তা পোড়ানো হয়।
কথা হয় শম্ভুপুর ইউনিয়নের মৃৎশিল্প তৈরি করার কাজে নিয়োজিত পরিপদ পাল ও দিলিপ পালের সাথে।
তারা বলেন একসময় তারা গৃহস্থালির কাজে নিত্যব্যবহার দ্রব্যাদি তৈরি করলেও এখন শুধু দধীর
পাতিল তৈরি করেই জীবিকা নির্বাহ করি। এসব পণ্য তৈরি করতে এটেল মাটি সংগ্রহ করতে হয়। ট্রাক ভাড়াসহ প্রতি ট্রাক মাটির ক্রয় করতে খরচ পড়ে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।
মাটি প্রস্তুত, বিদ্যুৎ, লাকড়ি, শ্রমিকদের খরচ বাদ দিয়ে প্রতিটি টালীতে ৪ খেকে ৫ টাকা লাভ হয়। এর মধ্যে
রয়েছে নিজের পারিশ্রমিক। তবে সরকারি কিংবা বেসরকারি সহয়োগিতা পেলে এই শিল্পের
আরো প্রসার করা যেত।
ষাটোর্ধ্ব পরিপদ পাল বলেন, বাপ দাদার পেশা হিসেবে ছোট বেলা থেকেই এ পেশায় নিয়োজিত। পরিবারের পাঁচ সদস্যর এক ছেলে সরকারি চাকুরী করে আরেক ছেলে ব্যবসায়। স্ত্রী, মা এবং আমি এ পেশায় রয়েছি। দৈনিক ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ পাতিল তৈরি করি। এক সময় হাড়ি,
পাতিল, কলসি, থালা-বাটি, ফুলের টবসহ বিভিন্ন ধরলের খেলনা তৈরি করতাম কদরও ছিল বেশ।
প্রযুক্তির ব্যবহার ও আধুনিকতার ছোয়ায় বর্তমানে আর এসব পণ্য কিনছেনা মানুষ। শিউলী পাল পাল বলেন, আমি এবং আমার স্বামী দুজনে দৈনিক প্রায় ৩শ পাতিল তৈরি করি। এরপর পাইকারদের কাছে প্রতিটি টালী (পাতিল) বিক্রি করি ১০ থেকে ১২ টাকা। স্বামী স্ত্রীর দুই
জনের তৈরি করা টালী বিক্রি করে প্রতি মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় করি। যা দিয়ে চলে আমাদের সংসার।
স্থানীয়দের সাথে আলপকারে জানায়, অতীতে গ্রাম-গঞ্জে মাটির তৈরি পণ্যসামগ্রীর কদর ছিলো অনেক বেশি। এসব পণ্য শোভা পেত প্রত্যেকের বাড়িতে বাড়িতে। গ্রীষ্মকালে মাটির কলসির এক গ্লাস পানি যেন দূর করে দিত সব ক্লান্তিকে। গৃহস্থালির নিত্যব্যবহার দ্রব্যাদি হাড়ি,
পাতিল, কলসি, থালা-বাটি, ফুলের টবসহ বিভিন্ন ধরলের খেলনা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতো এখানকার অসংখ্যা পরিবার।
প্রযুক্তির ব্যবহার ও আধুনিকতার ছোয়ায় বর্তমানে আর এসব পণ্য কিনছেনা মানুষ। কালের বিবর্তণে দিন দিন অধিকাংশ পণ্য হারিয়ে গেলেও একদিকে জীবিকা নির্বাহ অন্যদিকে পূর্ব পুরুষদের এ পেশাটিকে ধরে রাখতে দধীর পাতিল তৈরি করেই প্রতিনিয়ত চলছে এসব কারিগরদের সংগ্রাম। তাই মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতারও দাবি জানিয়েছেন এ শিল্পের সাথে জড়িতরা।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.