খুলনা প্রতিনিধি
খুলনার তেরখাদা উপজেলার ৩ নং ছাগলাদহ ইউনিয়ন পরিষদে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম দ্বীন ইসলাম দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ায় দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য দোলেনা খানম।
সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন তাকে অপসারণ করে প্যানেল চেয়ারম্যান-৩ মোঃ উজ্বল শেখকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।এ অবস্থায় ইউনিয়নের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
দোলেনা খানম ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। নির্বাচনের প্রথম সভায় তৎকালীন চেয়ারম্যান এস এম দ্বীন ইসলাম কারাগারে থাকায় তিনি ১ নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। পরে চেয়ারম্যান জামিনে মুক্ত হলেও দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডের কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নতুন প্যানেল গঠন করেন। তবে হাইকোর্টে দায়ের করা রিট পিটিশনের পর প্রথম গঠিত প্যানেলকেই বৈধ ঘোষণা করা হয়। ২০২৩ সালের ৩ মার্চ থেকে দোলেনা খানম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। প্যানেল চেয়ারম্যান-২ হন আনিছুর রহমান, প্যানেল চেয়ারম্যান-৩ মোঃ উজ্বল শেখ।
খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সম্প্রতি দোলেনা খানমের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর তাকে অপসারণ করে প্যানেল চেয়ারম্যান-৩ কে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। চেয়ারম্যান না থাকা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অনিয়ম-দুর্নীতি, অপসারণ এবং ২ নং প্যানেল চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে ৩ নং প্যানেলকে দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা।
৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য চৌধুরী নজরুল ইসলাম ও দোলেনা বেগমসহ কয়েকজন ইউপি সদস্য জানান, “২ নং প্যানেলকে বাদ দিয়ে কীভাবে ৩ নং প্যানেলকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হলো, তা পরিষদে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। আমরা চাই আগের প্যানেল ভেঙে নতুনভাবে প্যানেল তৈরি করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেওয়া হোক।” তারা জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনদের কাছে এই দাবি জানান।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইউনিয়নের চলমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব পরিষদের কার্যক্রমে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তারা প্রশাসনিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন। প্রবীণ নাগরিকরা আশা প্রকাশ করেছেন, সদস্যদের স্বীকারোক্তির পর সত্যের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে এবং ইউনিয়নে শান্তি ফিরে আসবে।
অপরদিকে, দোলেনা খানম অভিযোগ করেছেন, তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগে লিখিত জবাব দিয়েছি। কিন্তু উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হক প্রভাবিত হয়ে মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। পরে ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক সদস্য লিখিতভাবে স্বীকার করেছেন যে, তাদের অজান্তে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছিল। তারা কোনো অভিযোগ করেননি এবং স্বাক্ষর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংগৃহীত হয়েছে।”
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হক বলেন, “সবকিছু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে চলছে। আমরা চেষ্টা করেছি সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বিষয়টি ন্যায্যভাবে সমাধান করার।” উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল আফরোজ স্বর্ণা বলেন, “জেলা থেকে অফিসিয়াল নির্দেশ এসেছে। বিষয়টি আইনি বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হয়েছে। আমরা চাই সত্য উদঘাটিত হোক এবং ইউনিয়নে শান্তি বজায় থাকুক।”
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.