রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
খুলনায় অপরাধের ভয়াবহ বিস্তার এখন জননিরাপত্তাকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। শহরে সন্ধ্যা নামলেই শুরু হচ্ছে অস্ত্রের মহড়া, গোলাগুলি, কোপাকুপি আর খুনের ঘটনা। গত ১৪ মাসে খুলনা মহানগরীতে সংঘটিত হয়েছে ৫৫টি হত্যাকাণ্ড। পুলিশের দাবি, এসব হত্যার বেশির ভাগেই ব্যবহার হয়েছে পিস্তল আর এসব অস্ত্র সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধ পথে দেশে ঢুকছে।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, খুলনা নগরীতে কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ আধিপত্য বিস্তারের জন্য এলাকায় এলাকায় ভাগ বসিয়েছে। চাঁদাবাজি, মাদকের টাকা ভাগাভাগি ও এলাকায় কর্তৃত্ব বজায় রাখাকে কেন্দ্র করে খুন, সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও মারামারির ঘটনা বেড়েই চলেছে। গত এক বছরে শতাধিক গোলাগুলি, ছিনতাই, কোপাকুপি ও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে—যা প্রশাসনের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়েছে।
নাগরিকরা বলছেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের লাগামহীন বিস্তারের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না। ঘটনার পর পুলিশ আসলেও আগে থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণেই খুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহভাবে নষ্ট হয়েছে বলে দাবি তাদের।
এ বিষয়ে নাগরিক নেতা এডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, “খুলনায় খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও কোপাকুপির ঘটনা এখন নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ চরম আতঙ্কে জীবন কাটাচ্ছে। সন্ধ্যার পর এখন অনেকেই বাইরে বের হতে ভয় পায়।”
কেএমপির গোয়েন্দা শাখার ডেপুটি কমিশনার আনোয়ার হোসেন মাসুম বলেন, “নগরীতে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডগুলোর বেশির ভাগই পিস্তল দিয়ে সংঘটিত হয়েছে। তদন্তে দেখা যাচ্ছে, এসব অস্ত্র সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধ পথে দেশে ঢুকছে।” তিনি জানান, নগরীতে একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় থাকলেও দুটি গ্রুপ সবচেয়ে বেশি তৎপর। তাদের বেশ কয়েকজন সদস্য অস্ত্রসহ ধরা পড়লে দেখা গেছে, অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড তারা পিস্তল ব্যবহার করেই ঘটিয়েছে।
ডিসি মাসুম আরও বলেন, “সম্প্রতি দৌলতপুর ও নিরালা এলাকায় শটগানসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছে সন্ত্রাসীরা। এসব ঘটনার পেছনে বড় অস্ত্রচক্র রয়েছে। আমরা গভীরভাবে তদন্ত করছি।”
পুলিশের রেকর্ড বলছে, বর্তমান কেএমপি কমিশনার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেপ্টেম্বর মাসেই খানজাহান আলী থানায় প্রথম হত্যাকাণ্ড ঘটে। এরপর প্রায় প্রতি মাসেই শহরের বিভিন্ন থানা এলাকায় একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটতে থাকে। হরিণটানা, সোনাডাঙ্গা, লবণচরা, দৌলতপুর, সদর, খালিশপুর, আড়ংঘাটা—প্রায় সব থানাতেই বহু হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। বিশেষ করে আগস্ট, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে খুনের সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।
এগুলো পুলিশের নথিভুক্ত ঘটনার হিসাব। এর বাইরে বিভিন্ন এলাকায় পাওয়া অজ্ঞাত লাশ ও সন্দেহজনক মৃত্যুর ঘটনাও উদ্বেগ বাড়িয়েছে শহরবাসীর মনে।
নগরবাসীর অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসনের দুর্বলতা ও উদাসীনতার কারণেই অপরাধীদের দৌরাত্ম্য এতটা বেড়েছে। ১৪ মাসে ৫৫টি খুনের ঘটনা নিজেই প্রমাণ করে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ব্যর্থতা স্পষ্ট।
এ প্রসঙ্গে কেএমপির উত্তর বিভাগের ডেপুটি কমিশনার তাজুল ইসলাম বলেন, “অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। তবে দেখা যাচ্ছে, অপরাধীরা অপরাধ করেই এলাকা ছেড়ে অন্য জেলায় চলে যাচ্ছে। এতে তাদের ধরতে কিছুটা সময় লাগছে।” তিনি আরও দাবি করেন, “আইনশৃঙ্খলা দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। অপরাধীদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
খুলনা নগরীতে গত ১৪ মাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গোলাগুলি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী তৎপরতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সাধারণ মানুষ এখন প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে বাস করছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন কতটা সক্ষম—তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলছেন নগরবাসী।
তাদের প্রত্যাশা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দৃশ্যমান ভূমিকা রেখে দ্রুত এসব সন্ত্রাসী গ্রুপকে চিহ্নিত করে দমন করবে এবং খুলনাকে ফিরে দেবে নিরাপত্তার শহর হিসেবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.