মোছা: কাবা কাকলি, কবি নজরুল কলেজ প্রতিনিধি
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবি নজরুল সরকারি কলেজে অপর্যাপ্ত ওয়াসরুমের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন প্রতিষ্ঠানটির নারী শিক্ষার্থীগণ। প্রতিদিনের ক্লাস, পরীক্ষা কিংবা দীর্ঘ সময়ের ক্যাম্পাসে অবস্থানের সময় এই সমস্যা এখন নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেড় শতাব্দীর প্রাচীন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ২১ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় অর্ধেকের মতো। কিন্তু নারী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে মাত্র কমনরুমে ২ টি ওয়াসরুম। এবং সি ভবনের চারতলায় দুইটি ওয়াসরুম ছাত্রীদের জন্য থাকলেও তা কমন ওয়াসরুম হিসেবে ব্যবহৃত হয় এমনকি অধিকাংশ নারী শিক্ষার্থী জানেই না যে নারীদের জন্য আলাদা ওয়াসরুম রয়েছে।
বাকি ওয়াসরুম গুলো কমন হলেও সেগুলো অপরিষ্কার, দুর্গন্ধযুক্ত যা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহারের একদমই অনুপযোগী। তাছাড়া বিদ্যমান ওয়াশরুমগুলোর বেশিরভাগই ভাঙাচোরা বা পানির সংকটে অচল অবস্থায় পড়ে আছে। কোথাও পানির ব্যবস্থা থাকলেও টিস্যু বা বদনা নেই, আবার কোনো ওয়াশরুমে দরজার তালা নষ্ট।
এইসব কারণে মেয়েরা দীর্ঘ সময় পানি না খেয়ে থাকেন, কিংবা চেপে রাখেন পায়খানা ও পেশাপ এর প্রভাব পড়ে শরীরে। এজন্য মূত্রথলির সংক্রমণসহ নানা ধরণের শারীরিক সমস্যায় পড়তে হয় নারীদের। দীর্ঘ সময় পানি না খেয়ে থাকলে প্রথমেই পানিশূন্যতা হয়। এরপর টয়লেট চেপে রাখা ইউরিন ইনফেকশনের একটি কারণ। মহিলারা ইউরিনের বেগ চেপে রাখছেন! বাড়ছে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের ভয়! ডায়াবেটিস বা কঠিন রোগে আক্রান্ত রোগীদের ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ আসে।
দীর্ঘসময় ধরে টয়লেট চেপে রাখতে গিয়ে শোচনীয় অবস্থা হয় তাঁদের। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ইউরেথ্রা বা মূত্র নিষ্কাশনের জায়গার দৈর্ঘ্য কম। ফলে মহিলাদের মূত্রনালীতে চট করে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। নোংরা জায়গায় ইউরিন করা, জল কম খাওয়ার কারণে পুরুষদের থেকে মহিলাদের মধ্যে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) বেশি হয়।
ইউরিন পাসের জন্য নোংরা জায়গা বা টয়লেট এড়িয়ে চলতে হয়। বিশেষ করে যে জায়াগায় ইউরিন পাস করছে, সেই জায়গাটি খুব ভালো করে পরিষ্কার থাকা দরকার। দূর্বল স্যানিটাইজেশন নারীদের জন্য একটি বড় বাধা। নারীদের জন্য খারাপ স্যানিটাইজেশন এর প্রভাব বহুমুখী। এটি মহিলাদের জন্য উল্লেখযোগ্য সাস্থ্যগত প্রভাব ফেলে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কলেজের ‘বি’ ভবনের নিচতলায় ছাত্রী ও ছাত্রদের জন্য দু’টি শৌচাগারই অপরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধযুক্ত। একই ভবনের দ্বিতীয় তলায় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পাশে অবস্থিত শৌচাগারটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। শিক্ষার্থীদের দাবির পর সেটি খোলা হলেও তিনটি শৌচাগারের মধ্যে মাত্র একটি সচল—তাও সবসময় তালাবদ্ধ থাকে, কারণ সেটি লাইব্রেরির স্টাফরা ব্যবহার করেন।
এছাড়া ‘সি’ ভবনের নিচতলার শৌচাগারগুলো সংস্কারের নামে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ভবনের অন্য তলাগুলোর শৌচাগারগুলোতেও তালা ঝুলছে, যা সংশ্লিষ্ট তলার বিভাগের শিক্ষকেরা ব্যবহার করেন। বি, সি ভবনের মতোই ‘এ’ ভবনের শৌচাগারও একই অবস্থায়—যেখানে ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য একই ওয়াশরুম ব্যবহারের সুযোগ থাকায় নারী শিক্ষার্থীরা পড়ছেন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে।
রসায়ন বিভাগের বলেন কলেজে গেলে ক্লাসের ফাঁকে লাইব্রেরিতে পড়তে বসি। একদিন একটার পর একটা ওয়াশরুম ব্যবহার করতে গিয়ে দেখি, কোনো'টা দরজা ঠিকমতো বন্ধ হয় না, কোথাও পানি নেই। পরে নিচতলায় গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যবহার করতে হয়েছে। এখন কলেজে এসে পানি কম খাই, যেন টয়লেটে যেতে না হয়।
উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের( ২১-২২) সেশনের লিমা বলেন, ক্যাম্পাসের ওয়াসরুম গুলো এত বেশি দুর্গন্ধযুক্ত আর অপরিষ্কার যে এগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। আর কমনওয়াসরুম গুলোর আবার লক নষ্ট । একটি সরকারি কলেজে মেয়েদের জন্য এমন পরিস্থিতি খুবই দুঃখজনক। এমতাবস্থায় ক্যাম্পাসের ওয়াসরুম ব্যবহার খুবই বিব্রতকর।
কলেজের আরেক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। শিক্ষার পরিবেশ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধিও সমান জরুরি। আমরা মেয়েরা প্রতিদিন যেভাবে ভোগান্তি পোহাচ্ছি, তা অত্যন্ত কষ্টদায়ক।
কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,প্রতিদিনই ওয়াশরুমগুলো পরিষ্কার করা হয়, আবার প্রতিদিনই নোংরা হয়ে যায় । দেখি আমরা আবার বলে দিবো পরিষ্কার করার জন্য।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.