মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে শনিবার দিনব্যাপী খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাসিয়া সম্প্রদায়ের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে বাঙালি ও দেশী-বিদেশী পর্যটকরাও অংশগ্রহণ করেন। বর্ষপুঞ্জি অনুযায়ী ১২৬তম বর্ষকে বিদায় জানিয়ে ১২৭তম বর্ষকে বরণ করা হয়।
খাসিয়া সম্প্রদায়ের এই উৎসব ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ২৩ নভেম্বর ‘খাসি সেঙ কুটস্যাম’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তবে মৌলভীবাজারে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে এবছর অনুষ্ঠান এক দিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিলেট অঞ্চলের প্রায় অর্ধশত খাসিয়া পুঞ্জির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
উৎসবের শুরুতে আয়োজক কমিটি সকল পুঞ্জি প্রধানকে পাগরী পরিয়ে সম্মাননা জানান এবং অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানানো হয়। মাগুরছড়া ফুটবল মাঠের এক প্রান্তে নারিকেল গাছের পাতার ছাউনী দিয়ে আলোচনা সভার মঞ্চ তৈরি করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান জিডিসন প্রধান সুচিয়াং, অতিথি ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মো. মুজিবুর রহমান চৌধুরী ও এনসিপি যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাশ।
বর্ষবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে খাসিয়ারা তাদের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে আদি পাহাড়ি নৃত্য ও গান পরিবেশন করেন। পাশাপাশি জীবিকার প্রধান উৎসব জুম চাষ ও অন্যান্য জীবন-জীবিকার প্রক্রিয়া নৃত্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল এই উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠান চলাকালে মাছ শিকার, ঐতিহ্যগত খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ ঐতিহ্যবাহী খাবার আয়োজন করা হয়। এছাড়া খাসিয়া জনগোষ্ঠীর লোকেরা মেলায় বসে ঐতিহ্যবাহী পণ্যের স্টল সাজান, যেখানে পোশাক, পান, তীর, ধনুক, বাঁশ-বেতের জিনিসপত্র প্রদর্শন করা হয়।
বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের কো-চেয়ারম্যান জিডিসন প্রধান সুচিয়াং বলেন, “সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও আদিবাসীদের অধিকার বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা রয়েছে। খাসিয়া জনগোষ্ঠীর বর্ণিল সংস্কৃতি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ুক—এটাই আমাদের লক্ষ্য।”

