রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
খুলনায় নির্মিত নতুন আধুনিক কারাগার উদ্বোধনের পর ২২ দিন পার হলেও সেখানে এখনো স্থানান্তরিত হয়েছে মাত্র ১৪০ বন্দি।
বিপুল এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা এ কারাগারটি দক্ষ জনবল সংকটে এখন কার্যত নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে মাত্র ৮০ জন কারারক্ষীর ওপর নির্ভর করেই পরিচালিত হচ্ছে এর পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কারা সূত্র বলছে, জনবল ঘাটতির কারণেই একসঙ্গে বেশি সংখ্যক বন্দিকে সেখানে নেওয়া যাচ্ছে না। ধাপে ধাপে বন্দি স্থানান্তরের কাজ এগিয়ে চলছে, তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন বাড়তি ও প্রশিক্ষিত রক্ষী।
খুলনা জেলা কারাগারের জেলার মো. মুনির হুসাইন জানান, পুরাতন কারাগারে ধারণক্ষমতা ৬৭৮ হলেও বর্তমানে বন্দি আছেন ১ হাজার ৩৯ জন। এদের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত ২৮০ জন, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৬ জন এবং বাকিরা হাজতি। ইতোমধ্যে ১ নভেম্বর প্রথম দফায় ১০০ জন এবং ১৫ নভেম্বর আরও ৪০ জন বন্দিকে নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর বন্দিদের দ্রুত স্থানান্তরের বিষয়টি আরও গুরুত্ব পাচ্ছে। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে এ সপ্তাহের মধ্যেই খুলনা মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে থাকা বন্দিদের নতুন কারাগারে নেওয়া হতে পারে। জেলার অধীনস্থ ৯টি থানায় নতুন করে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদেরও এখন থেকে সরাসরি নতুন কারাগারে পাঠানো হবে, তারা আর পুরাতন কারাগারে যাবে না। অন্যদিকে পুরোনো কারাগারের প্রশাসনিক কার্যক্রম আপাতত আগের মতোই চলবে।
নতুন কারাগারের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে কারা কর্মকর্তাদের মাঝেও উদ্বেগ রয়েছে। বর্তমানে ১৪০ বন্দির নিরাপত্তায় নিয়োজিত ৮০ জন রক্ষীর মধ্যে ৪৭ জন নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত, বাকিরা বিভিন্ন কারাগার থেকে আনা। আরও ১০ জন রক্ষী রাজশাহীর কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং শিগগিরই তারা দায়িত্বে যোগ দেবেন। জেলার মুনির হুসাইন বলেন, বর্তমান বন্দিসংখ্যা অনুযায়ী নিরাপত্তায় তেমন সমস্যা নেই। কিন্তু বন্দির সংখ্যা বাড়তে থাকলে দক্ষ জনবল ছাড়া নিরাপত্তা জোরদার করা কঠিন হয়ে পড়বে।
খুলনা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম বলেন, বিস্তৃত এলাকা নিয়ে নতুন কারাগারের কার্যক্রম শুরু হলেও ভবিষ্যতে বন্দিসংখ্যা বাড়বে। সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে দক্ষ নিরাপত্তা রক্ষী বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। তার মতে, পর্যাপ্ত জনবল ছাড়া নতুন কারাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দীর্ঘমেয়াদে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত ১১৩ বছরের পুরোনো খুলনা কারাগারের জরাজীর্ণ ভবনে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকির মধ্যে বন্দিদের থাকতে হয়েছে। সেই পরিস্থিতি থেকে বের করতেই সিটি বাইপাস সড়কের জয়বাংলা মোড় এলাকায় প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নতুন কারাগার নির্মাণ করেছে গণপূর্ত বিভাগ।
পরিকল্পনা অনুযায়ী এখানে চার হাজার বন্দি রাখার সক্ষমতা থাকবে। তবে প্রথম ধাপে দুই হাজার বন্দির থাকার মতো অবকাঠামো প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে পরবর্তী ধাপে নতুন প্রকল্প নিয়ে অতিরিক্ত ভবন নির্মাণ করা হবে।

