শরিফুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার, নড়াইলঃ
নড়াইল সদর উপজেলার আগদিয়া গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ভেবেছিলাম এবার না খেয়ে থাকতে হবে। অনেক রাত ঘুমাতে পারিনি। প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের হস্তক্ষেপে ক্যানেল কেটে দেয়ায় আমন ফসল লাগাতে পেরেছি। আজ আমি খুব খুশি মনটা ভরে গেছে। শুধু কৃষক রফিকুল ইসলাম নন প্রভাবশালীদের দ্বারা সৃষ্ট জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেয়ে চার শতাধিক কৃষকের মুখে এখন হাসি। আড়াই’শ একর জমিতে জলাবদ্ধতার কারনে রোপা আমন বুনতে পেরেছিলাম না।
স্থানীয়রা জানায়, সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের আগদিয়া বিলে ৫ বছর ধরে প্রভাবশালী আইয়ুব বিশ্বাস ও লিয়াকত গাজী প্রাকৃতিকভাবে পানি নিস্কাষনের পথ বন্ধ করে মাছের ঘের করায় বর্ষা মৌসুমে গোটা বিলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। ফলে তিন ফসলি এই বিলের আউস-আমন চাষ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৯ সালে আইয়ুবকে প্রতি বছর ১৫ মন ধান দেওয়ার শর্তে সে তার জমির পাশে ক্যানেল কেটে দিলে বিলের পানি বের হয়ে যায়। ফলে গ্রামবাসী আউস-আমন ফসল ঘরে তোলে। গত বছর থেকে আইয়ুব ধানের পরিবর্তে ১৫ হাজার টাকা দাবি করে। স্থানীয়রা তাও মেনে নির্ধারিত টাকা তুলে দিলেও রহস্যজনক কারনে এ বর্ষা মৌসুমের প্রথমে ক্যানেল ভরাট করে দিলে আবারও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পরে গ্রামবাসী জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগে অভিযোগ করেন। আগদিয়া দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা কাজী জাকির হোসেন জানান, ক্যানেল কাটায় ৫০শতক জমিতে চাষের সুযোগ পেলেও তার এখনও ৯৬ শতকসহ গ্রামবাসীর এক’শ একর জমি পানির নীচে রয়েছে। তার দাবি লিয়াকতের ঘেরের পাশ দিয়ে ক্যানেল এবং পার্শ্ববর্তী একটি কালভার্টের নীচে ইট ও ভরাট মাটি অপসারণ করলে সমনাত জমিতেই আউস-আমন চাষ সম্ভব হতো।
কলাড়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তুষার তরফদার জানান, জলাবদ্ধতার বিষয়টি প্রথমে আমার নজরে আসে। পরে স্থানীয় কয়েকজন গ্রামবাসী জেলা প্রশাসন এবং কৃষি বিভাগের কাছে অভিযোগ করলে দেড় মাস আগে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার অফিস কক্ষে দুই পক্ষকে নিয়ে বসেন এবং থানা পুলিশ ও কৃষি বিভাগের সহায়তায় স্থানীয় গ্রামবাসী সেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে অবৈধ ক্যানেল কাটার ব্যবস্থা করলে বিলের অধিকাংশ জায়গার পানি নেমে যায়। পরে এসব জমি চাষের আওতায় আসে। কলোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্বাস সরদার বলেন, স্থানীয় আইয়ুব বিশ্বাসের কারনে বিলে জলাবদ্ধতা নিরসন হচ্ছিল না। পরে প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও গ্রামবাসীর সহায়তায় এটি সম্ভব হয়েছে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, আগদিয়া বিলে আরও কয়েকটি ঘেরের পাশে ক্যানেল কাটা প্র্রয়োজন। এছাড়া এখানে একটি কালভার্ট ভরাট হয়ে গিয়েছে। এটি পরিস্কার করে দিলে আরও এক’শ একর জমিতে আউস-আমন ও রবি ফসল চাষ সম্ভব বলে জানান। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে ঘের মালিক এবং ভূক্তভোগিদের নিয়ে বসে পুলিশ, কৃষি বিভাগ ও স্থানীয়দের সহায়তায় ক্যানেল কেটে ফসলের উপযোগি পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। নড়াইল কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, আগদিয়া বিলে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তড়িৎ পদক্ষেপে অবৈধ ক্যানেল অপসারণ করে আড়াই’শ একর জমি রোপা আমন চাষের আওতায় আনা হয়েছে। ফলে অতিরিক্ত চার হাজার মন ধান উৎপাদন হবে।