পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
শীতের হাওয়া বইতেই পলাশবাড়ীতে লেপ–তোষক তৈরির ব্যস্ততা যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে। সকালবেলা হালকা শীতের স্পর্শ, আর ধুনকরদের ধুনন যন্ত্রের টুংটাং শব্দ—সব মিলিয়ে শীতের আগমনী বার্তা এলাকায় নতুন কর্মপ্রাণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
গত কয়েকদিনে শীতের মাত্রা কিছুটা বাড়তেই উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে পৌর শহরের হাট–বাজার পর্যন্ত লেপ–তোষক তৈরির ধুম লেগে গেছে। ধুনকররা কেউ দোকানে বসে, আবার কেউ গ্রামে গ্রামে ঘুরে পুরনো লেপ খুলে তুলা ধুনিয়ে নতুন মতো সাজিয়ে দিচ্ছেন। তাদের দক্ষ হাতে পুরনো লেপ–তোষক হয়ে উঠছে একেবারে নতুন।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর ২০২৫) সরেজমিনে দেখা যায়—এসএম হাইস্কুল মার্কেট, টাউনহল বারান্দা, ঢোলভাঙ্গা, মাঠেরহাট, ফরিকহাট, আমলাগাছী, তালুকজামিরা ও কাশিয়াবাড়ীহাটসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই ভিড় করছেন ক্রেতারা। তুলা পরিষ্কার, ধুনন, কাপড়ে মোড়ানো, সেলাই—সব মিলিয়ে মৌসুমী ব্যস্ততা চরমে।
হরিণমারী গ্রামের ধুনকর রওশন মিয়া বলেন,“বছরজুড়েই লেপ–তোষকের কাজ করি। কিন্তু শীত শুরু হলেই কাজের চাপ বেশি থাকে। এবার তুলা আর কাপড়ের দাম অনেক বেড়েছে। লেপ বানাতে কাপড় লাগে গজপ্রতি ৫০–৭০ টাকা, তোষকের কাপড় ৫৫–১২০ টাকা। গার্মেন্টসের তুলা কেজি ৫০–১৬০ টাকা, আর শিমুলের তুলা ৪০০ টাকা। লেপ বানানোর মজুরি ৩০০–৪০০ টাকা, তোষক ২৫০–৩০০ টাকা। সব মিলিয়ে আগের মতো লাভ থাকে না।”
তিনি আরও জানান, নতুন লেপের তুলনায় ক্রেতারা এখন বেশি আগ্রহী পুরনো লেপ ধুনিয়ে নতুন করে বানাতে। এতে খরচও কম পড়ে এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বেশ সুবিধাজনক।
পৌরশহরের শিমুলিয়া গ্রামের বেবী বেগম বলেন,“নতুন লেপ বানাতে অনেক খরচ লাগে। তাই পুরনো লেপটা ধুনিয়ে কিছু নতুন তুলা মিশিয়ে বানিয়ে নিলাম। এতে খরচ কম, আর কাজটাও ভালো হচ্ছে।”
শহীদ মিনার সংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে লেপ–তোষক বিক্রেতা রাজু মিয়া জানান,“তুলার দাম বেড়ে যাওয়ায় লেপ–তোষকের দামও বাড়ছে। তাই অনেকেই এখন লেপের বদলে কম্বল কিনছেন। বাজারে দেশি–বিদেশি বিভিন্ন ধরণের কম্বল পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে তুলনামূলক সস্তা চায়না কম্বলের চাহিদা বেশি।”
শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধুনকরদের ব্যস্ততাও বাড়ছে। শীত নিবারণের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি জীবিকার লড়াইও রয়েছে। তাই শীতের প্রথম প্রহর থেকেই লেপ–তোষকের দোকানে জমে উঠেছে মৌসুমী ব্যস্ততা, রঙ, গন্ধ আর মানুষের কোলাহল—যা পলাশবাড়ীর শীতের এক পরিচিত দৃশ্যপট হিসেবে প্রতি বছরই ফিরে আসে।

