রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
খুলনার তেরখাদায় বোরো মৌসুমের প্রস্তুতি শুরু হতেই ধানের বীজের বাজারে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে সুবর্ণ-৩ জাতের বীজ সরবরাহ কমিয়ে কৃষকদের চাপে ফেলা এবং উচ্চমূল্যে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। সরকার নির্ধারিত মূল্য প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা হলেও স্থানীয় বাজারগুলোতে বীজ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায়।
উপজেলার কাটেঙ্গা, জয়সেনা, তেরখাদা ও শেখপুরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নির্ধারিত দামে বীজ পাওয়া দুষ্কর। কৃষকরা জানান, অধিকাংশ ডিলার দোকানে বীজ রাখেন না; চাহিদা বাড়লে গোপনে বেশি দামে বিক্রি করা হয়। এতে সময়মতো বীজ না পেলে মৌসুমের আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
জয়সেনার কৃষক ইকরাম বলেন, “দাম জিজ্ঞেস করলে দোকানদাররা বলে বীজ নেই। পরে গোপনে ১ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি করতে চায়। কৃষক হিসেবে উপায় নেই, কিনতে বাধ্য হচ্ছি।”
ইখড়ি এলাকার কৃষক ছবাব আলী জানান, “বীজ দোকানে রাখা হয় না। বেশি দাম বললেই বের করে দেয়।” বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনতে হয়।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা যুবদল নেতা ও কৃষি উদ্যোক্তা চৌধুরী আমিনুল ইসলাম মিলু অভিযোগ করে বলেন, “বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে একটি অসাধু চক্র কৃষকদের চাপের মধ্যে ফেলছে। আগে বলা হয় বীজ নেই, কিন্তু বেশি দামে দিলে হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই অবস্থায় কৃষকরা অনেক বেশি টাকা দিয়ে বীজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।”
অন্যদিকে বীজ সরবরাহকারী আব্দুল গনি কৃষি সম্ভারের প্রোপাইটার মো. মিজানুর রহমান বলেন, “বেশি দামে বিক্রি করার প্রশ্নই আসে না। চাহিদা বেশি হওয়ায় সংকট দেখা দিচ্ছে।” তবে কৃষকেরা তার বক্তব্যকে মানছেন না।
তেরখাদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শিউলি মজুমদার বলেন, “প্যাকেটের নির্ধারিত দামের বাইরে বিক্রি হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় বাজার মনিটরিং বাড়ানো হচ্ছে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল আফরোজ স্বর্ণা জানান, “বাজারে বীজের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনিয়ম পাওয়া গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কৃষকেরা উদ্বিগ্ন যে, মৌসুমের শুরুতেই এই অস্থিরতা উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণ না করলে তেরখাদার বোরো আবাদ এ বছর চরম চাপে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

