পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলুর প্রায় সাত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ ক্রোক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার দুপুরে দুদক, সম্মিলিত জেলা কার্যালয় গাজীপুরের সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হকের নেতৃত্বে উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজিরচর এলাকায় আদালতের নির্দেশে এসব সম্পদ ক্রোক করা হয়। এ সময় পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুবক্কর সিদ্দিকীকে রিসিভার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
দেলোয়ার হোসেন দেলু পলাশ উপজেলার কাজিরচর গ্রামের মো. সুরুজ আলীর ছেলে এবং ডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি।
দুদক জানায়, দেলুর বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক মামলা করেন। তদন্তে জানা যায়, দেলু তার অবৈধ সম্পদের মধ্যে ৬ কোটি ৮১ লাখ টাকার সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছিলেন। সম্পদ বেহাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দুদক আদালতে আবেদন করলে নরসিংদীর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ হুমায়ুন কবীর সম্পদ ক্রোক ও রিসিভার নিয়োগের আদেশ দেন।
আদেশের পর দুপুরে কাজিরচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে দেলুর সম্পদ ক্রোক করা হয়। পরে ইউএনও আবুবক্কর সিদ্দিকীর কাছে সম্পদ হস্তান্তর করা হয়।
ক্রোককৃত সম্পদগুলো হলো,কাজিরচর গ্রামে ২৭ শতাংশ জমিতে নির্মিত ২ হাজার ৩০৪ বর্গফুটের তিনতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি; মূল্য—৩ কোটি ১৩ লাখ ২৭ হাজার ৪৪ টাকা।
একই গ্রামে ৬ শতাংশ জমিতে নির্মিত ৩ হাজার ৬৫০ বর্গফুটের পাঁচতলা ভবন; মূল্য—৩ কোটি ৬৮ লাখ ৮ হাজার ২৫৭ টাকা।
মোট ৬ কোটি ৮১ লাখ ৩৫ হাজার ৩০১ টাকার সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. মশিউর রহমান, পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুবক্কর সিদ্দিকী, নরসিংদী জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সিনিয়র সদস্য হলধর দাসসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
স্থানীয়রা জানান, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেলোয়ার ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচিতি পান। এরপর শীতলক্ষাসহ আশপাশের এলাকায় কৃষিজমি থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এ জন্য তিনি একটি সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনীও গড়ে তোলেন। বর্তমানে তিনি ডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি। গত ১৭ বছরে তিনি শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে স্থানীয়দের দাবি। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি সহ অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর থেকেই তিনি এলাকা ছেড়ে পলাতক।
পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুবক্কর সিদ্দিকী বলেন, “আদালতের নির্দেশে দুইটি ভবন ক্রোক করেছি এবং রিসিভার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যেনো সম্পদ বেহাত বা বিক্রি না হয়, সেজন্যই এসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভবনের ভাড়াটিয়াদের দ্রুত অন্য জায়গায় সরে যেতে বলা হয়েছে।”

