শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের হুসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যাতায়াত পথ এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য চরম ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। বিদ্যালয়ের উত্তর ও দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে থাকা প্রায় ১৫ ফুট গভীর দুটি পুকুরের মাঝখানের সরু পাড় দিয়েই প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করছে অন্তত ১২৫ জন শিক্ষার্থী। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও স্থানীয়রা।
১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হুসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রায় চার দশক ধরে এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। এখান থেকে সরকারি বৃত্তি পেয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে অনেক শিক্ষার্থী আজ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত। কিন্তু সুনামের এই বিদ্যালয়ের প্রবেশপথ এখন শিক্ষার্থীদের জন্য যেন ‘মরণফাঁদ’।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয় ভবনের একেবারে গা ঘেঁষেই রয়েছে দুটি বড় পুকুর। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, পুকুরগুলোর গভীরতা প্রায় ১৫ ফুট। বিদ্যালয়ে প্রবেশের কোনো প্রশস্ত রাস্তা না থাকায় পুকুর দুটির মাঝখানের সরু আইলই শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের যাতায়াতের একমাত্র পথ। বর্ষা মৌসুম বা সামান্য বৃষ্টিতেই এই পথ কাদামাটিতে পিচ্ছিল হয়ে ওঠে। তাছাড়া পুকুরের পাড় ভাঙতে শুরু করায় রাস্তাটি আরও সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে, যেখানে পাশাপাশি দুজন হাঁটাও কষ্টকর। যে কোনো মুহূর্তে পা পিছলে বা পাড় ধসে পুকুরে পড়ে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ওসমান গণি জানায়, “স্কুলে আসার সময় খুব ভয় লাগে। রাস্তাটা অনেক চিকন, একটু এদিক-সেদিক হলেই পুকুরে পড়ে যাব। বর্ষাকালে তো আসতেই পারি না।”
চতুর্থ শ্রেণির ফাতেমা খাতুন ও তৃতীয় শ্রেণির রিফাত হোসেন জানায়, প্রতিদিন ভয় নিয়েই তাদের স্কুলে আসতে হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও জানায়, কষ্ট আর আতঙ্ক নিয়েই তারা এই পথ পাড়ি দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. রুবেল বলেন, “বিদ্যালয়টি চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার আগেই দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মাহমুদা খাতুন বলেন, “এই ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে আমরা নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। বিদ্যালয়ের নামে মোট ৩৩ শতাংশ জমি থাকলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় উন্নয়ন কাজের জন্য গাড়ি বা মালামাল প্রবেশ করানো সম্ভব হচ্ছে না। পুকুরের পাড় সংস্কার এখন সবচেয়ে জরুরি।” তিনি আরও জানান, স্কুল ভবনের পাশের একটি বড় বটগাছ ভবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যা কাটার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হবে।
বিদ্যালয় সংলগ্ন পুকুরের মালিক আব্দুস সাত্তার বলেন, “স্কুলের নিজস্ব কোনো রাস্তা নেই, তবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে যদি প্রশাসন বা স্কুল কর্তৃপক্ষ গাইড ওয়াল নির্মাণ বা রাস্তা প্রশস্ত করতে চায়, সেক্ষেত্রে আমার কোনো আপত্তি নেই।”
শেরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদা সুলতানা বলেন, “বিষয়টি জানার পর গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। দ্রুত সরেজমিনে পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গাইড ওয়াল নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।”
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ আহমেদ বলেন, “শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খুব দ্রুত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.