ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
দীর্ঘ প্রতীক্ষার সূর্যালোক যেদিন এই বাংলার দিগন্তে স্বাধীনতার বার্তা এনেছিল, সেই পবিত্র বিজয় দিবস আজ ঝিনাইদহের মাটিকে স্পর্শ করেছে এক বিশেষ মহিমায়। শ্রদ্ধাঞ্জলি, তোপধ্বনি আর পদযাত্রার মধ্য দিয়ে এই জনপদে পালিত হলো মহান বিজয় দিবস।
নক্ষত্রপতনের পর প্রভাতের প্রথম কিরণ যখন ঝিনাইদহের আকাশ রাঙালো, ঠিক তখনই সদর থানা প্রাঙ্গণে ধ্বনিত হলো ৩১ বার তোপধ্বনি—যা যেন ছিল বীর শহিদদের উদ্দেশে এক গভীর প্রত্যয় ও কৃতজ্ঞতার জয়ধ্বনি। এই ধ্বনির মধ্য দিয়েই শুরু হলো দিনব্যাপী কর্মসূচির মহৎ আয়োজন।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) প্রত্যূষে, যখন প্রকৃতি শান্ত ও পবিত্র, তখন শহরের স্বাধীনতা চত্বরের শহিদ স্মৃতিসৌধ মুখরিত হলো কৃতজ্ঞ হৃদয়ের কোলাহলে।
সাড়ে সাতটায় এই স্মৃতিস্তম্ভে নিবেদন করা হলো প্রথম পুষ্পার্ঘ্য। প্রথমে, জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাসউদ এবং পুলিশ সুপার আশিকুর রহমান পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে সেই বীর আত্মাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন, যাঁরা এই ভূখণ্ডের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এর পর একে একে এগিয়ে এলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রবীণ সৈনিকেরা, ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের শব্দসৈনিকেরা, সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
মুক্তিসংগ্রামের সেই অগ্নিগর্ভ ইতিহাসের সাক্ষী শহিদদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধার ডালি সাজানো হলো এই পবিত্র বেদিতে।
স্মৃতিসৌধে অর্ঘ্য নিবেদনের পর, ঝিনাইদহের রাজপথ মুখরিত হলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পৃথক পদযাত্রায়।
জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সহ অন্যান্য সংগঠনের কর্মীরা তাদের নিজস্ব ব্যানার নিয়ে বিজয়োল্লাসে শামিল হলেন।
দিনভর এই বিজয়ের আবাহন চলল কুচকাওয়াজের বর্ণিল প্রদর্শনী, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার আবেগঘন মুহূর্ত, আলোচনা সভার মননশীল আলাপচারিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রাণবন্ত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। যেন প্রতিটি আয়োজনই ছিল বাঙালির শৌর্য, ত্যাগ আর বিজয়ের অমর গাথাকে নতুন করে স্মরণ করার এক সুনিপুণ প্রচেষ্টা।

