যশোর প্রতিনিধি
অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে যশোরে একের পর এক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে। কেউ হারাচ্ছেন সহায়-সম্বল, কেউ আবার হতাশার চরম পর্যায়ে গিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। শহর থেকে গ্রাম—সবখানেই ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন জুয়ার নেশা।
যশোর সদরের চুড়ামনকাটি এলাকার জাহিদ আবদুল্লাহ সিফাত পেশায় একজন ফার্মাসিস্ট ছিলেন। প্রায় দুই বছর আগে অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। ধীরে ধীরে সব হারিয়ে হতাশায় ভেঙে পড়েন সিফাত। শেষ পর্যন্ত গত ২১ নভেম্বর রাতে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।
এর আগে সদর উপজেলার নোঙরপুর গ্রামের এইচএসসি পরীক্ষার্থী জিহাদ হোসেন অনলাইন গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে। নতুন মোবাইল ফোন কিনে দিতে দেরি হওয়ায় গত ১৮ নভেম্বর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সে।
কেশবপুর উপজেলার ইকরামুল কবির একজন মাছ ব্যবসায়ী। ব্যবসায় মন্দার কারণে বন্ধুদের প্ররোচনায় অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। ভাগ্য বদলানোর আশায় খেলতে গিয়ে উল্টো প্রায় ১৮ লাখ টাকার ঋণের বোঝা কাঁধে নিতে হয়েছে তাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, আর্থিক অনিরাপত্তা ও প্রযুক্তি সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে তরুণ-যুবকরা সহজ আয়ের লোভে অনলাইন জুয়ার ফাঁদে পা দিচ্ছেন। অথচ আইন থাকলেও এর যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
যশোর জজ কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. শামীম আহমেদ চৌধুরী জানান, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ অনুযায়ী অনলাইন জুয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও বাস্তবে আইন প্রয়োগ খুবই সীমিত।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত সাত মাসে যশোরে অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত মাত্র ছয়টি মামলা হয়েছে। তবে সামাজিকভাবে এর ক্ষতি অনেক বেশি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অনলাইন জুয়া রোধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও তরুণদের মানসিক কাউন্সেলিং জরুরি। তা না হলে অনলাইন জুয়ার এই ভয়াল ছোবল আরও বিস্তৃত হবে।

