আশরাফুজ্জামান সরকার, পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা)
সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘের (ইউএন) শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় শহীদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষী সবুজ মিয়াকে নিজগ্রাম পলাশবাড়ীতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে সেনাবাহিনীর বহনকারী হেলিকপ্টারে শহীদ সবুজ মিয়ার মরদেহ গাইবান্ধার তুলসীঘাট হেলিপ্যাডে আনা হয়। পরে সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের ছোট ভগবানপুর গ্রামে তার নিজ বাড়িতে নেওয়া হয়।
মরদেহ গ্রামে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। এক নজর দেখার জন্য আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও এলাকাবাসীর ঢল নামে। প্রিয় ছেলেকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শহীদের মা ছকিনা বেগম। বারবার জ্ঞান হারাতে থাকলে স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। চারদিকে শোক আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।
এদিকে শহীদ সবুজ মিয়ার স্ত্রী, উচ্চ মাধ্যমিক শেষ বর্ষের ছাত্রী নূপুর আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “বিয়ের মাত্র এক বছর আট মাসের মাথায় আমার সব স্বপ্ন ভেঙে গেল। এক মুহূর্তেই সব শেষ হয়ে গেল।”
শহীদ সবুজ মিয়া পলাশবাড়ী উপজেলার ছোট ভগবানপুর গ্রামের মৃত হাবিদুল ইসলামের ছেলে। ছোটবেলাতেই বাবাকে হারিয়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন তিনি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে দেশ ও জাতির জন্য জীবন উৎসর্গ করেন এই সাহসী সেনাসদস্য।
জানাজা শেষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাবের আহমেদের নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসন শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তার বাবা ও দাদীর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। এ সময় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শহীদ সবুজ মিয়ার ব্যবহৃত সামগ্রীসহ পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা ৫ মিনিটে শহীদ ছয় সেনাসদস্যের মরদেহ ঢাকায় পৌঁছায়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম মরদেহ গ্রহণ করেন। এ সময় উপস্থিত সবাই এক মিনিট নীরবতা পালন ও সম্মানসূচক স্যালুট প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় ৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী শহীদ হন। এতে আহত হন আরও ৯ জন, যারা বর্তমানে শঙ্কামুক্ত। আহতদের মধ্যে ৮ জন কেনিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.