রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির কেন্দ্রীয় এক নেতা মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
তার নাম মোতালেব শিকদার (৪২)। তিনি শ্রমিক শক্তির খুলনা বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা হয়েছে।
মামলায় জেলা জাতীয় যুব শক্তির যুগ্ম সদস্য সচিব মোসা. তনিমা ওরফে তন্বীকে এক নম্বর আসামি এবং অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৭-৮ জনকে আসামি করা হয়।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) মোতালেব শিকদারের স্ত্রী রহিমা আক্তার ফাহিমা বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
এদিকে নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার ওই ফ্ল্যাটে মাদক সেবনের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছিল বলেও পুলিশ ও বাড়ির মালিকের ভাষ্যে উঠে এসেছে। মোতালেব শিকদার এবং তনিমা ওরফে তন্বী নামে এক নারী স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ফ্ল্যাটটিও ভাড়া নেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, তনিমা জাতীয় যুবশক্তির খুলনা জেলা শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব। গত ৪ অক্টোবর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. তরিকুল ইসলাম ও সদস্যসচিব ডা. জাহেদুল ইসলামের স্বাক্ষরে যুবশক্তির খুলনা জেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়, সেখানে ১ নম্বর যুগ্ম সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পান তনিমা।
জানা গেছে, মোতালেবকে গুলি করার সময় তিনি ওই বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। তনিমা বিবাহিত এবং তার স্বামী আছেন। পুলিশের বারবার জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন তার স্বামীর নাম তানভির শেখ।
খুলনা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) তাজুল ইসলাম জানান, রোববার রাত ১২টার দিকে দুই সহযোগীকে নিয়ে তনিমা ওরফে তন্বীর বাড়িতে যান মোতালেব শিকদার। সারারাত তারা সেখানেই ছিলেন। সোমবার সকালে ওই বাড়িতে ৪/৫ জনের একটি গ্রুপ প্রবেশ করে। তারা মোতালেব শিকদারকে মারধর এবং অর্থ দাবি করে। একপর্যায়ে তারা ভয় দেখাতে গুলি করলে গুলিটি তার মাথার চামড়া স্পর্শ করে বেরিয়ে যায়। মোতালেব নিজে হেঁটেই হাসপাতালে যান। তখন অন্যরা পালিয়ে যায়।
তাজুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলে কারা ছিল এ তথ্য জানতে তন্বীকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি কিছু তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে সেগুলো প্রকাশ করা যাচ্ছে না। অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, প্রায়ই তন্বীর বাড়িতে যেতেন মোতালেবসহ অন্যরা। সেখানে মাদক সেবন করা হতো। গুলির পর ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ওই কক্ষে অসামাজিক কাজের কিছু ভিডিও ফুটেজও তাদের হাতে এসেছে।
এদিকে সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মোতালেব শিকদারের পরিবার। সেখানে মোতালেবের স্ত্রী রহিমা আক্তার ফাহিমা দাবি করেন, ট্র্যাপে ফেলে মোতালেব শিকদারকে সেখানে নেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে কারা ছিল, অস্ত্রধারী কারা এবং সেই অস্ত্র কোথায়- এগুলো খুঁজে বের করলে মূল ঘটনা বের হয়ে আসবে।
গুলিবিদ্ধ মোতালেব শিকদার পেশায় ট্রাকচালক। সে বটিয়াঘাটা শ্রমিক ইউনয়িনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করত। নগরীর পল্লীমঙ্গল স্কুলের পাশে তার বাড়ি। বাবার নাম মুসলিম শিকদার। তিনি খুলনা বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য।
২০১৯ সালে বিভাগীয় ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে ওঠাবসা ছিল তার। শ্রমিক লীগ নেতা ও বিভাগীয় মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লবের সঙ্গে তার সখ্য ছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেলের সাথে ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাসে এনসিপির এক নেতার মাধ্যমে দলে যোগ দেন তিনি। সেখান থেকেই জাতীয় শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় আহ্বায়কের পদ বাগিয়ে নেন।
শ্রমিক লীগ নেতা ও বিভাগীয় মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব বলেন, মোতালেব আওয়ামী লীগ বা শ্রমিক লীগে কোনো পদে না থাকলেও আমাদের সঙ্গেই তার ওঠাবসা ছিল। একাধিকবার নির্বাচনও করেছে। শ্রমিক লীগের আরেক নেতা সরোয়ার কাজীর সঙ্গে দলীয় মিটিং-মিছিলে অংশ নিত।
খুলনা মহানগর এনসিপির সংগঠক রাহাত হোসেন বলেন, আমরা খোঁজ নিয়েছি মোতালেবের গুলির ঘটনাটি কোনো সাংগঠনিক বিষয় নয়। তিনি যেখানে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, সেটা তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। সংগঠন এ দায়ভার নেবে না।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.