রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
খুলনা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ হারুন অর রশিদের দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে পরিচিত ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি এমডি আসলাম হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর রহস্যজনকভাবে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে খুলনা সদর থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর খুলনা নগরজুড়ে ব্যাপক আলোচনা ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মার্কেটের সামনে থেকে এমডি আসলাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে খুলনা সদর থানা পুলিশ।
তিনি খুলনা সদর থানার নন-এফআইআর প্রসিকিউশন মামলা নং–৩৫৬/২৫ (তারিখ: ৮ ডিসেম্বর ২০২৫) অনুযায়ী দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় জারি হওয়া ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। আসলাম হোসেন খুলনা জেলা পরিষদের নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত।
স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গ্রেপ্তারের পর তাকে থানায় নেওয়া হলেও কিছু সময়ের মধ্যেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
বিশেষ করে, আদালতের ওয়ারেন্টভুক্ত একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ না করে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় অনিয়ম ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগও আলোচনায় আসে।
এ বিষয়ে খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, “ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে গ্রেপ্তারের পর তিনি গুরুতর শারীরিক অসুস্থতার কথা জানান। তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে তাকে খুলনা জেলা পরিষদের একজনের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।”
তবে পুলিশের এই ব্যাখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজ্ঞ ও সচেতন মহল। তাদের মতে, ওয়ারেন্টভুক্ত কোনো আসামি অসুস্থ হলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার বিধান রয়েছে। ব্যক্তিগত জিম্মায় ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি আইনসঙ্গত কি না—তা স্পষ্ট নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইনজীবী বলেন,
“ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করা বাধ্যতামূলক। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হলে তা আইন লঙ্ঘনের শামিল হতে পারে এবং এটি শৃঙ্খলাবিরোধী আচরণ হিসেবে গণ্য হবে।”
এদিকে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, খুলনা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ হারুন অর রশিদের মেয়াদকালে সংঘটিত নানা দুর্নীতির ঘটনায় এমডি আসলাম হোসেনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এমন একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে এভাবে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
ঘটনাটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, যদি কোনো অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে আসামিকে ছেড়ে দেওয়া হয়ে থাকে, তবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জনআস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রশাসনিক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করে ছেড়ে দেওয়ার এই ঘটনা শেষ পর্যন্ত কোন পরিণতি পায়—সেদিকেই এখন নজর খুলনাবাসীর।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.