মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
নওগাঁর মান্দা উপজেলায় দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অদূরে ছাড়পত্রবিহীন একটি অবৈধ ইটভাটা পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ শুরু হওয়ায় চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে দুই বিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, মান্দা উপজেলার সাবাইহাট এলাকার ঝাঁঝরের মোড়ে নওগাঁ–রাজশাহী মহাসড়কের পাশে ‘যমুনা ব্রিকস’ নামের ইটভাটাটি স্থাপন করেছেন গোসাইপুর গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি কার্তিক চন্দ্র মণ্ডল। ভাটাটির মাত্র ২৫০ মিটার দূরত্বে অবস্থিত একরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একরুখী উচ্চ বিদ্যালয়। আশপাশে রয়েছে আবাসিক এলাকা ও দুটি আমবাগান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে ফিক্সড চিমনির মাধ্যমে ইট পোড়ানো হচ্ছে। কয়লার পাশাপাশি ভাটায় কাঠ মজুদ করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গত রোববার (২৯ ডিসেম্বর) বিদ্যালয়ের একেবারে পাশেই ইট পোড়াতে দেখা গেছে।
একরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, “গত বছর ভাটা চালু হওয়ার পর আমার এক বন্ধু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়।”
একরুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, ইট পোড়ানো শুরু হলে অনেকেই শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা ও চোখে জ্বালাপোড়ায় ভোগে। কালো ধোঁয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবে ক্লাস করা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া বিদ্যালয় মাঠের আমগাছের ফল পরিপক্ব হওয়ার আগেই পচে ঝরে পড়ে।
উল্লেখ্য, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত) অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাগান ও আবাসিক এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ আইন উপেক্ষা করে প্রায় ২০ বছর ধরে এ ভাটাটি পরিচালিত হয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বলেন, “ইটভাটার বিষয়ে তেমন কোনো অভিযোগ পাইনি। সম্প্রতি যমুনা ব্রিকস ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে।”
ভাটামালিক কার্তিক চন্দ্র মণ্ডল দাবি করেন, “পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই ভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছি। সবাই যেভাবে অফিস ম্যানেজ করে ব্যবসা করছে আমিও সেভাবেই করছি।” তিনি এ বছর সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধও জানান।
একরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, “আমি সাত বছর ধরে এখানে কর্মরত। ইটভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শিক্ষার্থীরা মাঝেমধ্যে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।”
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আখতার জাহান সাথী বলেন, “যমুনা ব্রিকসের পরিবেশগত ছাড়পত্র রয়েছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নই। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। লাইসেন্সবিহীন সব ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এদিকে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.